গত ছয় মাসে বেশ কয়েক ডজন বাংলাদেশিসহ ৬ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট’ ভিসায় তারা যুক্তরাষ্ট্রে এসে এমন সব কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন- যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির পরিপন্থি। এমনকি অনেকে হামাসের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্যে তহবিল সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্প প্রশাসন। একই সঙ্গে ভার্সিটি-কলেজ ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল-মিটিংয়ে যোগদানকে ইহুদি-বিদ্বেষী আচরণ হিসেবে নথিভুক্ত করাসহ কেউ কেউ নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালিয়ে বা অনেকে শিক্ষাঙ্গনে অনুপস্থিত থেকে রেস্টুরেন্ট/খুচরা দোকানে কাজ করার মাধ্যমে ভিসা রীতি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৮ আগস্ট গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ভিসা বাতিল হয়েছে এমন শিক্ষার্থীর অনেকেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের পক্ষে কাজ করছিলেন। এ ছাড়া চার হাজারের মতো শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে ভিসার নিয়ম লঙ্ঘনের জন্যে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভিসা বাতিল হওয়াদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জনই সন্ত্রাসী সংগঠন ‘হামাস’-এর জন্যে তহবিল সংগ্রহ করতেন এবং হামাসের নির্দেশনা অনুযায়ী ভার্সিটি প্রাঙ্গণে অস্থিরতা তৈরি করেছিলেন। ভিসার রীতি লঙ্ঘন করার কারণ দেখিয়ে ৪ হাজারের মতো ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসা’ বাতিল করা হয়েছে। জানা যায়, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মার্কিন শিক্ষাঙ্গনে তুমুল বিক্ষোভ শুরুর পরই ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এসব বিক্ষোভে নেতৃত্ব এবং সাংগঠনিক তৎপরতায় লিপ্তদের ভিসা বাতিলের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। কারণ এসব আন্দোলনকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি মনে করেছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে যে, দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যে ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট’দের টার্গেট করা হয়েছে। ফলে নানান ছুঁতোয় ভিসা বাতিল এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের খড়গ নেমে এসেছে এমন শিক্ষার্থী ভিসাধারীদের ওপরও। এমনকি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের মামুলি অভিযোগের জন্যেও বাতিল করা হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর ভিসা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সব শিক্ষাঙ্গনেই এক ধরনের ভীতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এহেন আচরণকে চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন আদালতে আইনি লড়াই অব্যাহত রয়েছে। তারপরও স্টুডেন্ট ভিসা বাতিলের ঘটনায় অনেক দেশেই স্টুডেন্ট ভিসা কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অঘোষিত স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। ‘প্রেসিডেন্ট’-এর এলায়েন্স অন হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন’র সিইও মরিয়াম ফেল্ডব্লাম এহেন আচরণের নিন্দা জানিয়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, ৬ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর পরিপন্থি। এভাবে মেধাবীদের হতাশ করা হচ্ছে। প্রকারান্তরে তা যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নেও বাধার দেয়াল তৈরি করবে। কারণ, কৃতিত্বের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা সম্পন্নের পর অধিকাংশ বিদেশিই যুক্তরাষ্ট্রের বসতি গড়েছেন এবং এই আমেরিকাকে বিশ্বের সেরা দেশে পরিণত করতে নিরন্তরভাবে অবদান রাখছেন।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল যে, তারা এক হাজারের মতো ভিসা বাতিল করেছেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে।