শাপলা ছাড়া নতুন ৫০টি প্রতীকের মধ্য থেকে যে কোনো একটি বেছে নিতে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদিকে দলীয় প্রতীক ‘শাপলা’ পাওয়া নিয়ে অনড় অবস্থানে জুলাই বিপ্লবীদের এই রাজনৈতিক দলের নেতারা। ইসির এমন অবস্থানকে ‘পক্ষপাতমূলক’ উল্লেখ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁরা। এনসিপিকে ইসির শাপলা না দেওয়ার পেছনে এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ঘোষণা দিয়েছেন প্রতীক নিয়ে তৈরি হওয়া এই সংকট রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার। এনসিপি বলছে প্রতীক না দিলে তারা সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে এবং কমিশনের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে শাপলা না পেলে রাজপথের কর্মসূচির দিকে যাবে দলটি।
দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইসি স্পষ্টভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। প্রতীক হিসেবে শাপলা আদায়ে আমাদের রাজনৈতিক লড়াই চলবে। ইসি নিরপেক্ষ জায়গা থেকে বিবেচনা না করে অদৃশ্য চাপে এনসিপিকে ভালো প্রতীক থেকে বঞ্চিত করছে। ফলে শাপলা পাওয়ার জন্য এনসিপি বুদ্ধিবৃত্তিক, কৌশলগত ও মাঠের কর্মসূচির মাধ্যমে লড়াই জারি রাখবে।
দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী শাপলা প্রতীক সংকটের প্রেক্ষিতে বলেছেন, নিবন্ধন সংক্রান্ত ইসি থেকে প্রাপ্ত চিঠিতে যেসব বিকল্প প্রতীকের নাম রয়েছে তা হাস্যকর ও বৈষম্যমূলক। শাপলা না দিলে প্রয়োজনে ইসি ঘেরাও করা হবে।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এ প্রসঙ্গে এক বক্তব্যে বলেছেন, শাপলা না দিলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। দলীয় সূত্র জানায়, ইসিতে নিবন্ধন আবেদন জমা দেওয়ার পরপর শাপলা প্রতীক নিয়ে সারা দেশে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে এনসিপি। প্রতীকটি জনগণের কাছে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শাপলা এখন এনসিপির দলীয় ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। এনসিপির এই জনপ্রিয়তাকে ক্ষুণ্ন করতে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনে প্রতীক নির্ধারণে শুধু বাংলাদেশ না এই উপমহাদেশের অন্যান?্য দেশেও স্ব স্ব দেশের প্রকৃতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির ছোঁয়া আছে। ‘শাপলা’ প্রতীক নির্ধারণেও আমরা সে বিষয়টি বিবেচনা করেছি। এটি এমন একটা প্রতীক যেটা আপামর জনতার সঙ্গে আমাদের কানেক্ট করে। পাশাপাশি নিবন্ধনের জন্য আবেদনের আগেও আমরা বিভিন্ন জেলা উপজেলায় আমাদের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের মাঝে ডিজিটাল জরিপ পরিচালনা করি, যেখানে সবাই শাপলাকে এগিয়ে রাখে। তিনি আরও বলেন, সব ধরনের নিয়ম মেনে নিবন্ধনের জন্য এনসিপি আবেদন করে গত ২২ জুন। সেদিন থেকে পুরো দেশের মানুষ শাপলা দিয়ে এনসিপিকে চিনছে। কোনো ধরনের আইনি বাধা নেই শাপলা পেতে। একদমই না। নির্বাচন কমিশনেরও মনে হয় না কোনো অনিচ্ছা আছে এনসিপিকে শাপলা দিতে। কিন্তু পারছে না চাপে পড়ে। আর কোনো মহলের জেদের জন্য যদি শাপলা প্রতীক দেওয়া না হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। দলের যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইসি শাপলা না দেওয়ার বিষয়ে যেসব যুক্তি উপস্থাপন করছে তার কোনোটিই যৌক্তিক নয়। এবি পার্টিকে ঈগল দেওয়া হয়েছে। যেটি বিমান বাহিনীর প্রতীক। জামায়াতকে দাঁড়িপাল্লা দেওয়া হয়েছে। যেটি আদালতের প্রতীক। ইসিকে আমরা শাপলার অনেক মডেল দেখিয়েছি যেগুলো জাতীয় প্রতীকের সঙ্গে মেলে না। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে পড়ে তারা আমাদের সঙ্গে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন। আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে প্রয়োজনীয় সব রকম পথই আমরা ব্যবহার করব। আলোচনার টেবিলে শান্তিপূর্ণভাবে শাপলা না পেলে আমরা রাজপথে নামব।