জুলাই গণ অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) যে রায় দিয়েছেন, তাতে ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে’ বলে মনে করে বিএনপি। গতকাল রাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের জনমত এবং বাংলাদেশের জনগণের দাবি ও প্রত্যাশা ছিল যেন পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের মানবতাবিরোধী ও নৃশংস, জঘন্য হত্যাকা এবং গণহত্যায় অপরাধের বিচার করা হয়। আইসিটি দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মানদ বজায় রেখে আজ (গতকাল) আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দুই দোসরের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ রায়ের ফলে আমরা মনে করি দীর্ঘ ১৬ বছরের গুমখুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার এবং ২০২৪ ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার সহস্রাধিক শহীদের আত্মা শান্তি পাবে এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে।’ গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
এর আগে রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, শেখ হাসিনার যে বিচার হয়েছে তা তার অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়। কিন্তু এটি শুধু অতীতের বিচার নয় বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি শিক্ষা। গতকাল বিকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনাল বলেছে, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
রায় থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক বলেন, এ বিচার অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়। কিন্তু এটা শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়, সামনের দিনের জন্য উদাহরণ। যাতে কারও শাসনামলে আর ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র না হয়, কেউ যাতে ফ্যাসিস্ট না হয়ে ওঠে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে, আর তা হলো- ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক বা যত দীর্ঘদিন ক্ষমতা ভোগ করুক, একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এটি একটি মাইলফলক।
সালাহউদ্দিন আহমদ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আমলে গুমের শিকার হয়েছিলেন। তাকে ঢাকা থেকে গুম করে ভারতের শিলংয়ে নিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। রায় ঘোষণার পর জুলাইয়ের ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবার এবং জুলাইযোদ্ধারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তারা আদালতেই স্লোগান দিয়ে ওঠেন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল সবাইকে শান্ত হতে বলেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়।