জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ ফিল সিমন্সের দেখা হোটেলের লিফটে। স্মিত হেসে সিমন্স বললেন, ভারত ম্যাচ নিয়ে চাপে আছো? পাল্টা হাসলেন জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে চাপ থাকবেই। সে চাপ উপেক্ষা করেই খেলবে বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়া আর ফিল সিমন্সের সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে বাংলাদেশ-ভারত ফুটবলীয় লড়াইয়ের উত্তেজনাটা বেশ বুঝিয়ে দিল। সুদূর ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে আসা ক্রিকেট কোচ ফিল সিমন্সের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে এ উত্তেজনা! বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে তো বটেই!
আবেগ, উত্তেজনা আর মর্যাদার লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব থেকে দুই দলই বিদায় নিয়েছে। আজকের ম্যাচ থেকে পাওয়ার আছে কেবল, মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়ার গৌরব। ভারতের বিপক্ষে ফুটবলীয় লড়াইয়ে প্রায় দুই যুগ আগে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনালের সেই জায়গাটাই এখনো সুখস্মৃতি হিসেবে মনে রেখেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। এরপর আরও অনেক বারই মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। মাঝে মধ্যে ড্র করলেও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। প্রায় দুই যুগের আক্ষেপটা আজই ঘুচিয়ে নিতে চান জামাল ভূঁইয়ারা। গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক বলেন, ‘অনেক বারই ভারতের মুখোমুখি হয়েছি। এ ম্যাচটা সবসময়ই আমাদের কাছে আবেগ আর উত্তেজনার। চাপও থাকে অনেক। তবে আমরা শিখেছি কীভাবে চাপ সামাল দিতে হয়। অতীতে কখনো ভারতকে হারাতে পারিনি। আশা করি, এবার সেই আক্ষেপ দূর হবে।’ নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে দারুণ খেলেছেন জামাল। তবে ভারতের বিপক্ষে তিনি একাদশে থাকবেন কি না, বলা কঠিন। অতীতে জামালকে বেশির ভাগ সময়ই মাঠের বাইরে রেখেছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। অবশ্য হামজা চৌধুরীর সঙ্গে জামালের বোঝাপড়াটা দারুণ। লাল-সবুজের জার্সিতে চারটি গোল করেছেন হামজা। এর মধ্যে দুটিই করেছেন জামাল ভূঁইয়ার অ্যাসিস্টে। নেপালের বিপক্ষে জামালের ক্রসেই বাইসাইকেল কিকে গোল করে সাড়া ফেলে দেন হামজা। হামজার সঙ্গে এমন বোঝাপড়া নিয়ে জামাল বলেন, ‘আমরা দুজনই ইউরোপে বেড়ে উঠেছি। সম্ভবত এ কারণেই আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে আমরা সব সময়ই একে-অপরের কাছে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাই।’
ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে আবেগ-উত্তেজনা সম্পর্কে বেশ ভালোই জানা আছে স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার। তার অধীনে ভারতের সঙ্গে এক ম্যাচ ড্র করেছে বাংলাদেশ। এখনো অপরাজিতই আছেন তিনি। আজ জিতলে তার অনেক আক্ষেপই দূর হতে পারে। কাবরেরা বলছেন, ‘আমরা জানি, এ ম্যাচের গুরুত্ব অনেক। তবে আমাদের আবেগটা পাশে রেখে লড়াই করতে হবে। তবেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারব।’ ভারতের বিপক্ষে জয়ের প্রতিজ্ঞা করেছেন হামজা চৌধুরী। সামিত সোমও তার মনের ইচ্ছে জানিয়েছেন। জামাল ভূঁইয়াও গতকাল বললেন, জয়ের কথা। কোচ হাভিয়ের কাবরেরা টানা পাঁচ ম্যাচ জয়শূন্য থাকার পর ভারতের বিপক্ষে জয় দিয়ে সব ব্যর্থতা দূর করতে চান। ভারতের বিপক্ষে জয় চায় পুরো বাংলাদেশই। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ভুলে গোল খেয়ে জয় হাতছাড়া করার পুরোনো ভোলটা কি পাল্টাতে পারবে বাংলাদেশ! জামাল ভূঁইয়া সহজেই স্বীকার করলেন, ‘আমাদের ডিফেন্সে দুর্বলতা আছে। শেষ মুহূর্তে ভুল করে গোলও হজম করি। তবে আমরা গোলের অনেক সুযোগ তৈরি করি। এটাও তো ইতিবাচক দিক। গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারি না, এটা হতাশার।’ জামাল আশা করেন, গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ দ্রুতই সাফল্যের ধারায় ফিরবে।
ভারত এক শক্তিশালী দল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। সঙ্গে এনেছে অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া রায়ান উইলিয়ামসকে। গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্তও রায়ান ফিফা, এএফসি ও অস্ট্রেলিয়ার অনাপত্তিপত্র পাননি। এর অর্থ, আজ হয়তো তাকে মাঠে দেখা যাবে না। তবে বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ কাবরেরা ভারতের প্রতিটা ফুটবলারকেই সমান যোগ্যতা সম্পন্ন মনে করেন। সেভাবেই দলকে প্রস্তুত করেছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামলে অতীতে নিশ্চিন্ত মনেই খেলত ভারত। তবে এখন আর সে সময় নেই। ঘরোয়া ফুটবলে বেশ বাজে সময় পার করছে ভারত। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এক শর ভিতর থেকে নিচে নামতে নামতে চলে এসেছে ১৩৬ নম্বরে। এখনো বাংলাদেশের (১৮৩) চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবে খেলার মানের দিক দিয়ে ভারতেরও বড় রকমের পতন হয়েছে। বিষয়টা বেশ ভালো করেই জানেন ভারতীয় কোচ খালিদ জামিল। গতকাল তিনি চিন্তিত কণ্ঠেই বললেন, ‘বাংলাদেশ বেশ ভালো দল। প্রতিটা ফুটবলারই দারুণ খেলে। আমরা এ ম্যাচ নিয়ে বেশ চাপে আছি। তবে আশা করি, ভালো একটা ম্যাচ উপহার দিতে পারব।’ ম্যাচটা যেমনই হোক, বাংলাদেশের দর্শকরা এ ম্যাচে জয় চান ঠিক হামজা, সামিত আর জামালদের মতোই।