বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড বিক্রি, ছেঁড়াফাটা নোট বদল, সরকারি চালানের টাকা গ্রহণ এবং চালান-সংক্রান্ত ভাংতি টাকা প্রদানের মতো পাঁচ ধরনের সেবা আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরপর এসব সেবা আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কার্যালয়ে পাওয়া যাবে না; গ্রাহকদের এগুলো গ্রহণ করতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা থেকে। নিরাপত্তা জোরদার ও ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে এসব খুচরা সেবা ধীরে ধীরে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ভবনের নিচতলায় অবস্থিত মতিঝিল কার্যালয়টি ১৯৮৫ সাল থেকে এ ধরনের সেবা দিয়ে আসছিল।
সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত : বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শাখা কার্যালয় থেকে ধাপে ধাপে খুচরা সেবা বন্ধের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। একাধিক বৈঠকের পর গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত রবিবার এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেন। এর ফলে সাধারণ মানুষের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি খুচরা সেবা প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারণ ও তদারকির মতো মূল দায়িত্বে অধিক গুরুত্ব দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে মতিঝিল কার্যালয়ের ২৮টি কাউন্টারের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড কেনাবেচাসহ মোট ১০ ধরনের সেবা দেওয়া হয়। আধুনিকায়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আপাতত পাঁচ সেবা প্রদানকারী ১২টি কাউন্টার ৩০ নভেম্বরের পর বন্ধ হয়ে যাবে। ডিসেম্বর থেকে মতিঝিলে নগদ টাকায় সঞ্চয়পত্র বা প্রাইজবন্ড কেনাবেচা হবে না; সরকারি ট্রেজারি চালান জমা নেওয়া হবে না এবং ভাংতি টাকা ও ছেঁড়াফাটা নোট বদলের সেবাও বন্ধ থাকবে। তবে ধাতব মুদ্রা বিনিময়, স্মারক মুদ্রা বিক্রি, অপ্রচলিত নোট বিরোধ নিষ্পত্তি ও ব্যাংক সংক্রান্ত কিছু লেনদেনসহ ১৬টি কাউন্টারে সীমিত সেবা চালু থাকবে। এগুলোও ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কেন এই উদ্যোগ : কেপিআই (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) নিরাপত্তা নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চঝুঁকির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তালিকাভুক্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মতিঝিল কার্যালয়ে সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াত নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। গত ২২ জুন গভর্নরের সরেজমিন পরিদর্শনের পর ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর একাধিক সভা শেষে জনসম্পৃক্ত ১০টি সেবার মধ্যে আপাতত পাঁচটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লক্ষ্য ধীরে ধীরে মতিঝিল কার্যালয়ের সব কাউন্টার বন্ধ করা।
গ্রাহকের ভোগান্তি হবে না : বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গ্রাহকদের কোনো ভোগান্তি হবে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে যাতে তারা নির্বিঘ্নে এসব সেবা দিতে পারে। প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’