চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে ৩০ বছরের কার্যক্রম ও কার্যসম্পাদন (বর্ধিত মেয়াদসহ) চুক্তি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ চুক্তিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কাঠামোর আওতায় লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ডিজাইন, অর্থায়ন, নির্মাণ ও পরিচালনা করবে ড্যানিশ প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারের পক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং এপিএম টার্মিনালসের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, নৌপরিবহন সচিব নুরুন্নাহার চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী, আইবিএস এপিএম টার্মিনালসের হেড অব ইনভেস্টমেন্ট ভাস্কর সেনগুপ্ত, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোসে হ্যানসেন ও ঢাকায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার।
চুক্তিটি বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘যাদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি আজ তা দূর হবে।’ এ ধারাবাহিকতায় মোংলা সমুদ্রবন্দর পরিচালনায়ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। নৌপরিবহন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে দেশের অনেক তরুণ বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকরা চাকরির সুযোগ পাবে।’ পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী জানান, আগামী কয়েক বছরে আরও চারটি নতুন সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা হবে। এর মধ্যে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্তবাণিজ্য অঞ্চলের বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ব্রিকস মোলার বলেন, ‘বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও শক্তিশালী হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও টেকসই সহযোগিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করছে।’ ডেনমার্কের বৈশ্বিক দক্ষতা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা কাজে লাগানোর মাধ্যমে এ বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দরের মালিকানা চবকের কাছেই থাকবে আর এপিএম টার্মিনালস ও তাদের স্থানীয় যৌথ উদ্যোগ (জেভি) অংশীদার কেবল নির্মাণ, পরিচালনা ও ব্যবস্থপনার দায়িত্ব পালন করবে। চুক্তির আওতায় এপিএম টার্মিনালস চট্টগ্রামের লালদিয়ায় একটি সবুজ ফিল্ড বন্দর টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) নিয়ে আসবে। এটি হবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এককভাবে সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় ইকুইটি বিনিয়োগ।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক শক্তির প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা শক্তির হাতে ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানান্তর করার যে কোনো উদ্যোগ রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকি; এটি জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে।’