১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৫ বছর পর নিজের প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারের রায়ে মুখোমুখি হলে ফাঁসির দণ্ড পেলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ আমলে করা দুটি ট্রাইব্যুনালের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ৪৪টি ও ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে এখন পর্যন্ত ১১টি মামলার রায় এসেছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এখন পর্যন্ত শীর্ষ পর্যায়ের ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজনই জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলী। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও হত্যার ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও গুরুত্ব পাচ্ছে।
এদিকে নিজের গড়া এই ট্রাইব্যুনালেই আদালত অবমাননার একটি মামলায় বিনাশ্রম কারাদণ্ড পান শেখ হাসিনা। গত ২ জুলাই ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ‘২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’ শেখ হাসিনার এমন একটি বক্তব্যের অডিও রেকর্ড অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছিল এ বছরের শুরুর দিকে। তার এমন বক্তব্য বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা উল্লেখ করে আদালত অবমাননার মামলা করেছিল প্রসিকিউশন। সেই মামলায় শেখ হাসিনাকে সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।