বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি তুলে ধরতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘গুলি করার হুমকি’ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সদ্য বিদায়ী নগর প্রশাসক ও বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কাওছারের বিরুদ্ধে।
সোমবার বিকেলে নগর ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ঘটনার পর প্রশাসক নিজের নির্ধারিত বিদায়ী সংবর্ধনায়ও যোগ দেননি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন যানবাহন শাখার পরিদর্শক আতিকুর রহমান মানিক। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ভেবেছিলাম সিটি করপোরেশন দুর্নীতি, দালালি ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত হবে। কিন্তু গত এক বছরে প্রশাসকের আচরণে আমরা অপমানিত, অবহেলিত এবং বারবার হতাশ হয়েছি।
মানিক বলেন, ২০০৩ সালে অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ১২১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওয়ান ইলেভেনের সময়ে ২০০৭ সালে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। ২০১০ সালে হাইকোর্ট তাদের চাকরি বহালের রায় দেন। নিয়ম অনুযায়ী শূন্য পদে তাদের স্থায়ী করার আইনি বাধা নেই বলেও দাবি তার।
তার অভিযোগ, বিভাগীয় কমিশনার দায়িত্ব নেওয়ার পর শূন্য পদে স্থায়ী করার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করেননি। আইনগত ও মানবিক যুক্তি দেখালে বারবার আমাদের রুম থেকে বের করে দিয়েছেন। সর্বশেষ সোমবার দেখা করতে গেলে তিনি অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন এবং ‘গুলি করার’ হুমকি দেন।
কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, বিদায়ী প্রশাসক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বয়সজনিত অবসানের নামে ১৬০ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করেন। আবার অন্যদিকে নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেন। সম্প্রতি ৮টি পদের বিপরীতে ১২ জনকে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানান তারা।
কর্মচারীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারি কাজ, জমি ক্রয়সহ কোনো ফাইলেই ‘টাকা ছাড়া সই হয়নি’। দেড় শতাধিক টেন্ডার কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়া পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে করানো হয়েছে। বিদায়ের আগের তিনদিনে তিনি অসংখ্য অজ্ঞাত ফাইলে সই করেছেন।
তারা দাবি করেন, এসব অনিয়মে করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত আছেন। দুদক তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।
তবে বিদায়ী প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার আগে আওয়ামী লীগ-বিএনপির তিনজন মেয়র ছিলেন। কোর্টের রায় থাকলেও তারা কেন ওই কর্মচারীদের স্থায়ী করেননি? নিশ্চয়ই কোনো জটিলতা আছে?
তিনি আরও বলেন, আমি তাদের নিয়ে দুইবার মিটিং কল করেছি। কিন্তু একবারও তারা আসেননি। সোমবার বলেছি আইনজীবী নিয়ে আসতে, মঙ্গলবার বসব। কিন্তু তারা একদিনও অপেক্ষা করল না, বরং সংবাদ সম্মেলন করল।
গুলির হুমকির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
১৬০ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে বিদায়ী প্রশাসক বলেন, চাকরিবিধি অনুযায়ী বয়সজনিত কারণে তাদের অবসান দেওয়া হয়েছে। তাদের সন্তানদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়ার জন্য কমিটি করা হয়েছিল, তালিকা দিতে বলেছিলাম, সাত মাসেও পাইনি।
বিদায়ী সংবর্ধনায় না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে থেকেই একটি মিটিং নির্ধারিত ছিল। তাই যাওয়া সম্ভব হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই