ভোরের স্নিগ্ধ কুয়াশা, দিনের শিরশিরে অনুভূতি ও রাতের হিমেল হাওয়া যেন ফিসফিস করে বলছে শীত এসে গেছে। এখনো পুরো দমে তার উপস্থিতি দৃশ্যমান না হলেও হঠাৎ এক ফসলা শিরশিরে হাওয়ায় অসুস্থ হচ্ছেন অনেকে। ঘরে ঘরে দেখা দিচ্ছে জ্বর-সর্দিসহ বিভিন্ন রকম রোগ। রোগ-ব্যাধি স্বাভাবিকভাবে মানুষের কাজে কষ্টকর হলেও এতে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)।
কেননা মুমিনের ক্ষেত্রে রোগ-ব্যাধি শুধু কষ্টদায়ক অনুভূতি নয়, বরং পাপমোচনের একটি মাধ্যম। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিশ্বনবী (সা.)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর গায়ে হাত দিলাম এবং বললাম, আপনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত।’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, যেমন তোমাদের দুজনকে ভুগতে হয়।’ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আপনার জন্য আছে দ্বিগুণ সওয়াব।’ তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, কোনো মুসলিম কষ্ট বা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে কিংবা অন্য কোনো যন্ত্রণায় পতিত হলে, আল্লাহ তার গুনাহগুলো মোচন করে দেন, যেমনভাবে বৃক্ষ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে দেয়।’
(বুখারি, হাদিস : ৫৬৬৭)
বোঝা গেল, দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধরা, বিশেষ করে রোগ-ব্যাধির সময় ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর কাছে অনেক বড় সওয়াবের কাজ।
কারণ আল্লাহ মুমিনের ওপর যেসব পরীক্ষা দেন, সেগুলো তার গুনাহ মাফ হওয়ার এবং মর্যাদা বাড়ার উপায় হয়ে যায়। নবীরা ছিলেন সবচেয়ে বেশি পরীক্ষায় পড়া মানুষ, আর আমাদের মহানবী মুহাম্মদ (সা.)ও নানা বিপদে আক্রান্ত হতেন এবং ধৈর্য ধরে সেগুলো সহ্য করতেন।
কষ্টে ও বিপদে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণের এই শক্তি মুমিনের বিপদকে উপহারে বদলে দেয়। তাদের প্রতিটি অবস্থা তাদের জন্য নতুন নতুন কল্যাণের দ্বার খোলে। সুহায়ব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর।
সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকর-গুজার করে আর অস্বচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধারণ করে, প্রতিটিই তার জন্য কল্যাণকর।
(মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯০)
নিয়মিত নেক আমলকারী মুমিনরা অসুস্থতার কারণে সাময়িক ইবাদতে অক্ষম হলেও তাদের ইবাদতের সওয়াব বন্ধ হয় না। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমানকে আল্লাহ যখন দৈহিকভাবে পরীক্ষায় ফেলে দেন (অর্থাৎ পীড়াগ্রস্ত করেন) সে সুস্থাবস্থায় যেরূপ আমল করত ঠিক সেরূপ সওয়াব তার আমলনামায় লিখিত হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি এরূপ রোগে লিপ্ত থাকে। অতঃপর যদি তিনি তাকে নীরোগ করেন, তবে আমার যত, দূর মনে পড়ে, তিনি বলেছেন, তাকে তিনি ধৌত করে দেন। [অর্থাৎ তার গুনাহের ক্লেদ থেকে মুক্ত করে দেন] আর যদি তাকে মৃত্যু প্রদান করেন, তবে তাকে মার্জনা করে দেন।
(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫০২)
সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ধৈর্যশীলদের অপরিমিত (কোনো হিসাব ছাড়া) পুরস্কার দেওয়া হবে।
(সুরা : ঝুমার, আয়াত : ১০)
এসব আয়াত ও হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, ধৈর্যের প্রতিদান এমন অপরিসীম ও অগণিত রূপে দেওয়া হবে, যা কোনো ওজন বা হিসাবের যন্ত্র দ্বারা ওজন বা হিসাব করা সম্ভব হবে না। কারণ যার হিসাব করা যায়, তার একটি সীমা থাকে আর যার কোনো সীমা ও শেষ নেই, তা গণনা করা অসম্ভব। এটি ধৈর্যের এমন বৃহৎ মাহাত্ম্য, যা অর্জনের চেষ্টা প্রত্যেক মুসলিমকে করা উচিত। হতাশা, ক্ষোভ প্রকাশ বা কান্নাকাটির মাধ্যমে রোগ-ব্যাধি বা প্রতিকূল পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যায় না। অতএব, মুমিনের উচিত যেকোনো পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা এবং উত্তম প্রতিদানের আশা করা। তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন