রাগ প্রকাশ করলেই মন হালকা হয়, এমন ধারণা বহু দিনের। উদাহরণ টানা হয় প্রেশার কুকারের চাপ বেরোলেই স্বস্তি। কিন্তু মার্কিন গবেষকদের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ বলছে, বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাগ উগরে দিলে তা কমে তো না-ই, অনেক ক্ষেত্রে উল্টো আরও বাড়তে পারে।
ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ১৫৪টি গবেষণাপত্র খতিয়ে দেখার পরে জানিয়েছেন, রাগ প্রশমনের জনপ্রিয় পদ্ধতিগুলির মধ্যে অনেকগুলিই আসলে উল্টো ফল দেয়। গবেষক ব্র্যাড বুশম্যানের দাবি, “রাগ প্রকাশ করলেই তা কমে—এ বিশ্বাসের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।”
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রাগের মুহূর্তে অনেকেই দৌড়নো, জিম বা তীব্র শরীরচর্চাকে ভরসা করেন। তাতে শারীরিক উপকার মিললেও রাগ কমে না, কারণ এসব কর্মকাণ্ড শরীরের উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়; আর সেটাই রাগকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।
১০ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে চালানো এই অনুসন্ধান দেখিয়েছে, ক্রোধ আসলে দুই ভাগে কাজ করে, একটি শারীরবৃত্তীয়, অন্যটি মানসিক। এতদিন চিকিৎসকেরা মূলত মানসিক দিকটিকেই লক্ষ্য করে পরামর্শ দিতেন। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, রাগ সামলাতে হলে আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে শারীরিক উত্তেজনা।
‘রেজ রুম’ যেখানে মানুষ টাকা দিয়ে জিনিসপত্র ভাঙাভাঙি করেন; সেটিকেও পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানেও একই ফল, মনের চাপ কমলেও ক্রোধ থেকে যায়।
পরামর্শ কী? বিজ্ঞানীদের মতে, হালকা যোগ, পেশি শিথিল করার ব্যায়াম, ধীর, ছন্দময় শ্বাস-প্রশ্বাসের চর্চা, রাগের মুহূর্তে এক থেকে দশ পর্যন্ত গোনা, এসবেই নেমে আসে উত্তেজনা, শান্ত হয় মন।
বুশম্যানের কথায়, হৃদযন্ত্রের জন্য দৌড়নো ভাল, কিন্তু রাগ কমানোর জন্য নয়। রাগ নিরাময়ের চাবিকাঠি উত্তেজনা কমানো।
গবেষকদের সাম্প্রতিক এই পর্যবেক্ষণ পুরনো ধারণাকে নাড়িয়ে দিয়ে নতুন করে শেখাচ্ছে, রাগ সামলাতে ভাঙচুর বা গর্জন নয়, প্রয়োজন ধীরে ফেরা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল