এই সপ্তাহেই পৃথিবীতে আঘাত হানতে চলেছে একাধিক শক্তিশালী সৌর বা ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়। এর ফলে উত্তর গোলার্ধের আকাশে তৈরি হবে চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোর খেলা, যা নর্দার্ন লাইটস বা অরোরা বোরিয়ালিস নামে পরিচিত। এই ঝড়ের প্রভাবে সাময়িকভাবে কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থাও ব্যাহত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসনের পূর্বাভাস জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে সূর্য থেকে একাধিক 'করোনাল মাস ইজেকশন' বা গ্যাস ও কণার তীব্র বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই কণাগুলি ঘণ্টায় ১৬ লক্ষ কিলোমিটারের বেশি বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। এর তীব্রতার জন্য পাঁচ-স্তরের স্কেলে জি৪ মাত্রার ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যার অর্থ 'গুরুতর ঝড়' প্রত্যাশিত। সংস্থাটির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তারা জি২ মাত্রার ঝড়ের পূর্বাভাস দিলেও প্রথম দুটির আঘাত প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী, অর্থাৎ জি৪ মাত্রার ছিল।
সৌরঝড় কী এবং কেন হয়?
সৌরঝড় মূলত দুই ভাবে পৃথিবীতে ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় সৃষ্টি করে। একটি হলো করোনাল মাস ইজেকশন, এতে সূর্য থেকে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও কণার বিস্ফোরণ ঘটে। এটি পৃথিবীতে পৌঁছাতে ১৫ ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন সময় নিতে পারে। অন্যটি হলো সৌর ফ্লেয়ার্স, এতে তীব্র তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ ঘটে। এটি আলোর গতিতে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রগুলো পুনর্বিন্যাস হওয়ার ফলেই এই উভয় ধরনের ঘটনা ঘটে।
এই সৌরঝড়গুলো যখন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে আঘাত করে, তখন উচ্চ চার্জযুক্ত কণাগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গ্যাসগুলির সাথে সংঘর্ষ ঘটায়। এই সংঘর্ষের ফলেই গ্যাসগুলি সবুজ, গোলাপি বা নীল রঙে জ্বলে ওঠে, যাকে আমরা মেরুজ্যোতি বা অরোরা বলে থাকি। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র শক্তিশালী হওয়ায় এই আলোর প্রদর্শনী সাধারণত মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি দেখা যায়। সূর্যের বর্তমানে চলমান ১১ বছরের কার্যকলাপ চক্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকার কারণেই এই ধরনের আলো এখন আরও বেশি দেখা যাচ্ছে।
কোথায় দেখা যাচ্ছে নর্দার্ন লাইটস?
এই শক্তিশালী ঝড়ের কারণে মেরু অঞ্চলের বাইরেও অনেক জায়গায় নর্দার্ন লাইটস দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় (শিকাগো), কলোরাডো, ম্যাসাচুসেটস (বোস্টন), ওয়াশিংটন (সিয়াটেল), ক্যালিফোর্নিয়া (সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস), টেক্সাস (ডালাস), জর্জিয়া (আটলান্টা), নিউ ইয়র্ক এবং আইওয়ার মতো দূরবর্তী রাজ্যগুলিতে ইতিমধ্যেই বা শীঘ্রই এই আলোর ঝলকানি দেখা যেতে পারে। এছাড়া কানাডার মন্ট্রিয়াল, এডমন্টন ও ভ্যাঙ্কুভার, আয়ারল্যান্ডের কর্ক ও ক্যারলো এবং যুক্তরাজ্যের উত্তরাংশেও অরোরা দেখা যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই দৃশ্য ভালো করে উপভোগ করার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, রাতের বেলা উজ্জ্বল কৃত্রিম আলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এই ঝড়ের কোনো সরাসরি ক্ষতিকর প্রভাব না পড়লেও এটি জিপিএস ন্যাভিগেশন, রেডিও যোগাযোগ, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং মহাকাশের স্যাটেলাইটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাময়িক বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এমনকি বিদ্যুৎ গ্রিডও সাময়িকভাবে প্রভাবিত হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল