বিশ্বজুড়ে অদ্ভুত শারীরিক গঠন ও অসাধারণ উচ্চতার জন্য জিরাফকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। কিন্তু জিরাফের এই দীর্ঘ গলা এবং লম্বা পায়ের পেছনে কী ধরনের জৈবিক চ্যালেঞ্জ কাজ করে, তা নিয়ে নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য।
সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক আলোচনায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অব প্রিটোরিয়ার গবেষকরা একটি কল্পিত প্রাণীর ধারণা ব্যবহার করেছেন; যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘এলাফে’। এই প্রাণীটিকে কল্পনা করা হয়েছে অর্ধেক আফ্রিকান এল্যান্ড (এক ধরনের বড় হরিণজাতীয় প্রাণী) ও অর্ধেক জিরাফের সংমিশ্রণ হিসেবে। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, জিরাফের দীর্ঘ গলার জৈবিক সীমা বোঝা।
গবেষকরা জানান, যদি কোনো প্রাণীর শরীর এল্যান্ডের মতো হয় এবং জিরাফের মতো গলা থাকে, তবে সেই প্রাণীকে মাথায় রক্ত পৌঁছাতে হৃৎপিণ্ডকে অনেক বেশি চাপ নিতে হবে। কারণ, গলার উচ্চতা যত বাড়ে, রক্তচাপও তত বাড়াতে হয়, যাতে প্রচুর শক্তি লাগে। সহজভাবে বললে, এই শারীরিক গঠন মস্তিষ্কে রক্ত পাঠানোর খরচ তার বাঁচার কৌশলকে কঠিন করে তুলবে।
জিরাফ নিয়ে গবেষণা করা প্রাণীবিজ্ঞানী গ্রাহাম মিচেল তাঁর বই হাউ জিরাফস ওয়ার্ক-এ উল্লেখ করেছেন, জিরাফের পূর্বপুরুষদের প্রথমে লম্বা পা তৈরি হয়েছিল, এরপর এসেছে বড় গলা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, লম্বা পা থাকা হৃদপিণ্ডের কাজকে তুলনামূলক সহজ করে, কিন্তু লম্বা গলা ঠিক উল্টো কাজ করে, হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ বাড়ায়।
তবে লম্বা পা জিরাফের জন্য আরও একটি সমস্যা তৈরি করেছে। পানির কাছে গেলে তাদের সামনের দুই পা ছড়িয়ে নিচু হয়ে পান করতে হয়। এসময় তাদের নড়াচড়া অসুবিধাজনক হয় এবং শিকারির আক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণা দেখিয়েছে, পানির জায়গায় আসা প্রাণীদের মধ্যে জিরাফই সবচেয়ে বেশি ক্ষেত্রে পানি না খেয়েই চলে যায়; কারণ সেখানে তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
অন্যদিকে, বিজ্ঞানীরা আরও এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, একটি প্রাণীর গলা কতটা লম্বা হতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে তারা তুলনা করেছেন বিশাল আকৃতির প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসর সোরোপডদের সঙ্গে। জার্মানির একটি জাদুঘরে সংরক্ষিত গিরাফাটিটান নামের ডাইনোসরের গলা ছিল প্রায় ৮.৫ মিটার লম্বা। যদি এই প্রাণী সত্যিই মাথা এত উঁচুতে তুলত, তবে রক্তচাপ হতে হতো প্রায় ৭৭০ মিলিমিটার পারদ সমতুল্য, যা আধুনিক স্তন্যপায়ীর তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি। এমন রক্তচাপ ধরে রাখা বাস্তবে অসম্ভব বলে মনে করেন গবেষকরা। শরীরের বাকি অংশের প্রয়োজনীয় শক্তির তুলনায় শুধু রক্ত পাম্প করতেই এত শক্তি খরচ হয়ে যেত যে প্রাণীটি টিকে থাকতে পারত না।
গবেষকদের মতে, এ থেকেই বোঝা যায় গলার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির একটা জৈবিক সীমা আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতে যত প্রাণী এসেছে এবং বিলুপ্ত হয়েছে; কেউই জিরাফের চেয়ে বেশি উঁচু মাথা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল