রহস্যে ঢাকা এই পৃথিবীতে এমন কিছু স্থান আছে যেখানে বিজ্ঞানের সরল ব্যাখ্যাও কখনও থমকে যায়। রোমানিয়ার ট্রান্সসিলভানিয়ার ক্লাজ-নাপোকা অঞ্চলে অবস্থিত হোয়া বাচু অরণ্য ঠিক তেমনই এক জায়গা। মাত্র ২৫০ হেক্টর জঙ্গল, কিন্তু অদ্ভুত সব ঘটনার জন্য এটি বিশ্বের অন্যতম ‘হন্টেড ফরেস্ট’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। রহস্য, ভয়, কিংবদন্তি এবং বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের অদ্ভুত মিশেলে আজও মানুষের মন কাড়া এই অরণ্য।
স্থানীয়রা দাবি করেন, বহু দশক ধরে এখানে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে। জনপ্রিয় একটি লোককথা অনুযায়ী, বহু বছর আগে এক মেষপালক তাঁর প্রায় দু’শো ভেড়া নিয়ে এই বনে ঢুকে নিখোঁজ হয়ে যায়। এরপর আর কোনওদিনই তাদের খোঁজ মেলেনি। বনটির গোলকধাঁধার মতো গঠন এবং গভীর অন্ধকারের কারণে এ ঘটনাকে কেউ কেউ অবাস্তব বলে মনে করলেও লোকমুখে এটি এখনও ভয়াল কিংবদন্তি হিসেবেই রয়ে গেছে।
১৯৬০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় আসে হোয়া বাচু। জীববিজ্ঞানী আলেকজান্দ্রু সিফ্ট দাবি করেন, তিনি আকাশে ডিম্বাকৃতি এক অজানা উড়ন্ত বস্তু দেখেছেন এবং তার ছবি তুলতেও সক্ষম হন। কয়েক বছরের মধ্যেই, ১৯৬৮ সালে সেনাবাহিনীর টেকনিশিয়ান এমিল বার্নিয়া একই ধরনের একটি সসার আকৃতির বস্তু বনের উপরে উড়তে দেখেছেন বলে জানান। স্থানীয় মানুষও বহুবার আকাশে গোলাকার আলোর বলয় দেখার কথা জানিয়েছেন, যা বিতর্ককে আরও উস্কে দেয়।
অরণ্যে প্রবেশ করা পর্যটক ও গবেষকদের অনেকেই শারীরিক অস্বস্তির কথা বলেছেন। কেউ মাথা ঘোরার অভিযোগ করেছেন, কারও মতে শরীরে অদ্ভুত ফুসকুড়ি বা পোড়া দাগ দেখা দিয়েছে। যদিও এর পেছনে কোনও নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও মেলেনি, তবে কিছু গবেষণা জানায়—বনে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি। পাশাপাশি চৌম্বকীয় ও তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্রের অস্বাভাবিক পরিবর্তনও নথিবদ্ধ হয়েছে।
বনের মাঝখানে একটি উন্মুক্ত বৃত্তাকার অঞ্চল রয়েছে যেখানে কখনও কোনও গাছ, লতা বা ঘাস জন্মাতে দেখা যায় না। মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করেও বিজ্ঞানীরা কোনও অস্বাভাবিক উপাদান খুঁজে পাননি। ভূতুড়ে সব গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেই চিহ্নিত এই জায়গা।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, বহু আগে অন্যায়ভাবে খুন হওয়া কয়েকজন কৃষকের অশরীরী আত্মা এখানে ঘুরে বেড়ায়। তাঁদের মতে, গভীর রাতে বনের ভিতর থেকে নারীর কান্না, পদশব্দ কিংবা ফিসফিসানি শোনা যায়। যদিও বিজ্ঞানীরা এসবকে মানসিক বিভ্রম বা অডিও ইলিউশনের ফল বলে মনে করেন।
তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, অরণ্যের অস্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তা, ব্যাখ্যাতীত আলোর বলয়, কিংবা বনের কেন্দ্রে অনুর্বর বৃত্ত; এসব কি নিছকই প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য? নাকি বাস্তবের আড়ালেই লুকিয়ে আছে আরও গভীর রহস্য?
উত্তর এখনও অমীমাংসিত। আর ঠিক সেই কারণেই, রহস্যপ্রেমী ও গবেষকদের কাছে হোয়া বাচু অরণ্য আজও এক অদ্ভুত টান তৈরি করে ভয় এবং কৌতূহলে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল