আমাদের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা। তিনি তখন চ্যানেল আইয়ের সংগীতবিষয়ক প্রতিভা অন্বেষণের অনুষ্ঠান সেরা কণ্ঠের প্রধান বিচারক। এ অনুষ্ঠানের বিচারকাজ চলাকালীন চলে এলো রুনা লায়লার জন্মদিন। অনুষ্ঠানের সবাই মিলে ঠিক করলাম ছেলেমেয়েদের সঙ্গে এবার তার জন্মদিন উদযাপন করব। যারা তাকে গভীরভাবে চেনেন তারা নিষেধ করলেন। বললেন-এটা ঠিক হবে না। হয়তো বা তিনি বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন করবেন। আমি বললাম, তবু ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তার জন্মদিনটি উদযাপন করলে তারা সারাজীবন মনে রাখবে যে, রুনা লায়লার সঙ্গে তার জন্মদিন পালন করেছে। এটা তাদের জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে। ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে আমরা একটা ভালো কেক আনালাম।
সেরা কণ্ঠের অনুষ্ঠানটি রেকর্ডিং হচ্ছিল একটি স্টুডিওতে। রেকর্ডিং শেষে বললাম, আপা আজ তো আপনার জন্মদিন, আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। রুনা লায়লা একটু গম্ভীর গলায় বললেন, আপনারাও জানেন দেখছি। আমি বললাম, আপনি অনুমতি দিলে এই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একটা কেক কাটার ব্যবস্থা করতাম। ছেলেমেয়েরা অনেক খুশি হতো। তিনি গম্ভীরভাবে বললেন বাসায় তো আয়োজন আছে আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে যে। আমি তাকে জানালাম ছোট্ট আয়োজন বেশি সময় লাগবে না। তিনি বললেন কোথায় আয়োজন? তাকে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে গেলাম। সেখানে ছেলেমেয়েরা অপেক্ষা করছে।
তিনি কেক দেখে বললেন-মোমবাতি এনেছেন?
আমি বললাম কয়টা মোমবাতি লাগবে তা তো জানি না। তিনি হেসে দিলেন। আমি ছেলেমেয়েদের বললাম, তোমরা বুঝতেই পারছো আজ তোমাদের প্রিয় শিল্পীর জন্মদিন। তোমাদের কি কোনো প্রশ্ন আছে? তারা হইহই করে উঠল।
না কোনো প্রশ্ন নেই। কেক খাব।
রুনা লায়লা বললেন-ওমা কেক খাবার জন্য ব্যস্ত তোমরা? আচ্ছা তাহলে আমি কেক কাটছি বলেই ছুরিটা হাতে নিলেন রুনা লায়লা।
আমি বললাম আপা ওরা দু-একটি প্রশ্ন করবে আপনাকে।
তারা প্রশ্ন করল তিনি খুব মজা করে উত্তর দিলেন।
তারপর রুনা লায়লা কেক কাটার ভঙ্গি করলেন দু-একবার আর ছেলেমেয়েরা গেয়ে ওঠে হ্যাপি বার্থডে...। খুবই আনন্দ পেলেন তিনি এবং শেষ পর্যন্ত কেকটি কাটলেন আর ওদের মুখে তুলে দিলেন। কেকটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অনেক অনেক গল্প করলেন। তারপর তিনি বাসায় গেলেন। পরদিন আবার রেকর্ডিং। আমাকে সবাই বলতে লাগল-আজ রুনা আপা আসবেন কি না সন্দেহ। গতকাল যে কাণ্ডটা করলেন- কিন্তু ঠিকই রুনা লায়লা যথাসময়ে হাজির হলেন অনুষ্ঠানে। তিনি এসেই বললেন, গতকাল আমার জন্মদিনটি অনেক ভালো হয়েছে। আমার জীবনে এত ভালো জন্মদিন কাটিয়েছি কি না আমার মনে পড়ে না। আমি সারা রাত ভেবেছি ছেলেমেয়েরা আমাকে কত সুন্দর করে ফুল দিল। আমার সঙ্গে গল্প করল, এমন দিন সব সময় আসে না। হ্যাপি বার্থডে গানটাও গাইল। তবে ওরা গানটি বেসুরো গেয়েছে। সেজন্যই তো আমি ওদের এমনভাবে গান শেখাব যেন ওরা আর বেসুরো না গায়। এই হলেন আমাদের রুনা লায়লা। প্রিয় এই শিল্পীর জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।