বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আসলে কী চায়? তারা তো দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা। সাফল্য ও উন্নয়নই তো তাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। আদৌ তারা কি এ কাজ করছে? নির্বাচনের সময় তো কতই না প্রতিশ্রুত দেওয়া হয়। তা কি কখনো বাস্তবায়ন হয়েছে। অনেকে বলেন, বাফুফে শুধু নিতেই জানে, দিতে জানে না। কথাটি উঠছে তাদের কর্মকাণ্ড বা আজগুবি কথাবার্তা দেখে। বাংলাদেশ জাতীয় দল সামনে নেপালের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে। ৬ ও ৯ সেপ্টেম্বর ম্যাচ দুটি হওয়ার কথা। এজন্য এক মাস আগে থেকেই অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। অক্টোবরে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে হংকংয়ের বিপক্ষে কয়েক দিনের ব্যবধানে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে দুটি ম্যাচ রয়েছে বাংলাদেশের। তার আগে দুটি প্রীতি ম্যাচের গুরুত্ব রয়েছে। এখানে হাভিয়ের কাবরেরা তার শিষ্যদের মান বুঝতে পারবেন?
সবই ঠিক আছে, প্রশ্ন হচ্ছে প্রীতি ম্যাচের জন্য এক মাস আগে থেকেই ক্লাবগুলো খেলোয়াড় ছাড়বে কেন? এটা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হলে খেলোয়াড় ছাড়া যেত। জাতীয় দলের খেলার সময় কেউ তো আর তাদের খেলোয়াড় আটকে রাখত না। প্রীতি ম্যাচের এক সপ্তাহে আগেই খেলোয়াড়রা ক্যাম্পে গেলে চলে। বাফুফে যখন অনুশীলন শুরু করেছে তখন আবার ক্লাবগুলো তাদের প্রাক-মৌসুমের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বাফুফে কি জানে না বর্তমান পরিস্থিতিতে দল গড়তে ক্লাবগুলো কতটা কঠিন অবস্থায় ছিল। অর্থ সংকটে সবাই বন্দি। এর মধ্যে আবার যারা শিরোপার জন্য দল গড়েছে তাদের অবস্থা তো আরও কাহিল। অর্থ মন্দার মধ্যেও টাকা জোগাড় করে খেলোয়াড় সংগ্রহ করতে হয়েছে। এ অবস্থায় কোনো খেলোয়াড় যদি জাতীয় দলের ক্যাম্পে ইনজুরির শিকার হন তখন তো মাথায় হাত। বাফুফে কি তখন সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবে? ক্লাবগুলোর অনুশীলনে শুধু স্থানীয় নয় বিদেশি খেলোয়াড়রাও থাকেন। পুরো মৌসুমে দলের কৌশল ও ছক ঠিক করা হয়। যা প্রতিটি দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্নটা মূলত বসুন্ধরা কিংসকে নিয়ে। অন্যারা জাতীয় দলের ক্যাম্পে খেলোয়াড় ছাড়লেও তারা ছাড়েননি। কিংস কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিয়ম মেনেই হাঁটছে। প্রস্তুতি ম্যাচে জাতীয় দলের জন্য কখন খেলোয়াড় ছাড়তে হয় সে নিয়মই মানছে কিংস। ক্লাব থেকে কখনো বলা হয়নি আমরা খেলোয়াড় দেবই না বা প্রীতি ম্যাচে খেলবে না। অযথা বাফুফের কোনো কোনো কর্মকর্তা বক্তব্যে অস্থিরতা তৈরি করছেন। যা আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড্ড আপত্তিকর। যেমন কে কারা সামাজিক যোগাযোগে লিখছেন কিংস জাতীয় দলকে সহযোগিতা করছে না। যে ক্লাব বা তাদের প্রতিষ্ঠান ফুটবলের চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রাখছে তারা সহযোগিতা করছে না তা শুনলে তো পাগলও বলবে ওদের মানসিক হাসপাতালে পাঠানো উচিত। হ্যাঁ, এটাও ঠিক জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকলেও কিংসের খেলোয়াড়রা অনুশীলনেই থাকবেন। কিন্তু জাতীয় ও ক্লাবের অনুশীলনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। ক্লাবের কৌশলটা হবে গোপনীয় আর জাতীয় দলে সবার জন্য উন্মুক্ত।
একজন মানসম্পন্ন খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে কি পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয় বাফুফে কি জানে না। কেউ কেউ বলতে পারেন, অন্য দলগুলো তো খেলোয়াড় দিয়েছে। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এ নিয়ে আবার আবাহনীর কোচ মারুফ কী বলেছেন তা কি বাফুফের কর্মকর্তারা দেখেছেন? বলেছেন, এখানেও নিয়ম রয়েছে। ঘরোয়া আসরটা তো দেশের ফুটবলে প্রধান আকর্ষণ। মৌসুম শুরুর আগে কোনো খেলোয়াড় ইনজুরির শিকার হলে সেই ক্লাবের কতটা ক্ষতি হবে বাফুফে কি জানে না। কিংসের বিশ্ব নাথ তো জাতীয় দলের অনুশীলনের সময়ে ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। দেড় বছর মাঠে নেই। তার কি অবস্থা, কেমন আছেন খবর নেওয়ার প্রয়োজনই মনে করেনি। যা করা হচ্ছে ক্লাব থেকেই। অংশগ্রহণ মানি, প্রাইজমানি দেবে না। অথচ বিতর্ক ছড়াবে আসলে বাফুফে চায় কী?
একটা নিয়মাতান্ত্রিক বিষয়কে কয়েকজন কর্মকর্তা ঘোলাটে করছেন কোন উদ্দেশ্যে?
তা ছাড়া হেড কোচই তো বলেছিলেন, জাতীয় দলের সব প্রোগ্রাম সেপ্টেম্বর থেকে হবে। এজন্য বিধি ভেঙে লম্বা ছুটি কাটিয়েছেন তিনি। তিনি আবার কী করে ক্লাবগুলোর প্রাক মৌসুমের প্রস্তুতির শুরুর পর জাতীয় দলের ক্যাম্প ডাকলেন?