ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে আয়োজনে সহায়তা করতে বাংলাদেশকে ৪০ লাখ ইউরো দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আসন্ন নির্বাচনে নাগরিক পর্যবেক্ষণ এবং ভোটার এডুকেশনকেও গুরুত্ব দিচ্ছে ইইউ। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার সাংবাদিকদের এ কথা জানান। মিলারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সিইসির সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে। বর্তমান ইসির সঙ্গে এটি ইইউ রাষ্ট্রদূতের চতুর্থ বৈঠক।
বৈঠক শেষে মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সহযাত্রী’ হিসেবে কাজ করছে। আমি বিশেষভাবে এসেছি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে জানাতে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৪ মিলিয়ন ইউরোর বেশি সহায়তা দেবে, যাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে।
সিইসির সঙ্গে বৈঠক ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে মন্তব্য করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামীতে এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব আমরা। কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল নয়, ইউরোপীয় পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধিরাও ছিলেন মিলারের সঙ্গে।
মিলার বলেন, তারা আমাদের বাস্তবায়নকারী অংশীদার- নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তারা এখানে থাকবেন যাতে আসন্ন নির্বাচনে নাগরিক পর্যবেক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি ভোটার এডুকেশনকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিসেবে আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশ এবং নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে বদ্ধপরিকর, যাতে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। নির্বাচন কমিশনকে নানা ধরনের সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মাইকেল মিলার বলেন, তারা দক্ষতা উন্নয়ন, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেওয়া, কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি ও বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি সহায়তা করবেন। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে আমাদের কাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এখানেও স্বাধীনতা, দক্ষতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে একটি অগ্রাধিকারমূলক দেশ হিসেবে বিবেচনা করছে, বিশেষত, সম্ভাব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের জন্য।
এক প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাজ। আমরা এখন আলোচনা করছি বাস্তবিক কিছু পদক্ষেপ নিয়ে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করবে। আমরা এখানে এসেছি আমাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে। কারণ আমরা চাই, আপনাদের নির্বাচন যেন সত্যিই গ্রহণযোগ্য হয়, আন্তর্জাতিক মানের হয়, অবাধ ও সুষ্ঠু হয়।
আগামী মাসে ইইউর প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় আসবে বলে ইইউ রাষ্ট্রদূত জানান। তিনি বলেন, আগামী মাসে প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের একটি দল বাংলাদেশে আসবে। এটি পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ মিশন নয়। বিশেষজ্ঞদের কাজ হবে যাচাই করা যে এখানে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি না। আমরা সক্ষমতা ও বাস্তবতা যাচাই করছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিচ্ছি। ভোটার এডুকেশন, দেশীয় পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলোকে মাঠপর্যায়ে কাজের সক্ষমতা দেওয়া, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করা এবং ছোট ছোট নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করা। পাশাপাশি ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।