আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলাম ছুটিতেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর পরও অফিসে যাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ডেপুটি গভর্নর বলেন, বিএফআইইউ প্রধান এখন থেকে ছুটি কন্টিনিউ করবেন। তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত কার্যক্রম চলছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি অফিসে আসবেন না।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি গভর্নর বলেন, আমিই মঙ্গলবার বাধ্যতামূলক ছুটির বিষয়ে গভর্নরের নির্দেশনা বিএফআইইউ প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামকে জানিয়েছি।
সামাজিক মাধ্যমে বিএফআইইউ প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামের আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএফআইইউ প্রধান ছুটিতে থাকবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিএফআইইউ প্রধান বলেন, কিসের ছুটি? আমি অফিস করছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অফিসে এসেছি। তবে এরপরই তিনি ছুটিতে যেতে সম্মত হন।
এমন এক সময়ে এই ভিডিও কাণ্ড সামনে এসেছে, যখন পরিবহন ব্যবসায়ী এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের পর সেখান থেকে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেন তিনি। এতে অনৈতিক কিছু হয়েছে কি না-সে বিষয়ে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দলও এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।
সূত্র জানিয়েছে, গত নভেম্বর মাসে এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৫০টি অ্যাকাউন্টে ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করে বিএফআইইউ। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাংক আল-ফালাহর চারটি অ্যাকাউন্ট পুনরায় ফ্রিজ না করে প্রায় ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়। এই অভিযোগের তদন্ত করছে দুদক।
দুদকের আবেদনে গত ২৭ মে ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করার আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। অথচ দুদক এখন জানতে পেরেছে, এসব হিসাবে আছে আসলে ১০১ কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে, অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে বাকি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
শাহীনুল ইসলাম বলেন, এনা পরিবহনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়। ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠানকে আমরা এ রকম সুযোগ দিয়েছি। এখানে কোনও অনৈতিক লেনদেন হয়নি।
আর আপত্তিকর ভিডিও নিয়ে তিনি বলেন, আমাকে হেয় করার জন্য কে বা কারা এটা ছড়িয়েছে। এসব ভুয়া।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে তার আপত্তিকর ভিডিও চালাচালি শুরু হয়। পরে সোমবার বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তা ভাইরাল হওয়ার পরই বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে কাজ শুরু করে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৮ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন বিএফআইইউ’র তৎকালীন প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস। এরপর দীর্ঘদিন পদটি খালি থাকার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে শাহীনুল ইসলাম নিয়োগ পান। গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি যে তিনজনের নাম সুপারিশ করেছিল, সে তালিকায় তার নাম ছিল না। পরে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ছুটিতে পাঠানোর আগ পর্যন্ত তিনি বিএফআইইউ প্রধানের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/একেএ