সাজার মেয়াদ শেষ হলেও এখনো মুক্তি মেলেনি ১৪৭ জন বিদেশি বন্দির। তারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪৫ জন ভারতীয় নাগরিকের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। ভারতের যথাযথ সাড়া না পাওয়ায় এসব বন্দিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে কারা সূত্র। এই ভারতীয় নাগরিকদের বাইরেও পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ার দুজন বন্দি আছেন। নাইজেরিয়ান সিসমন্ড ফরচুন আটক হন গত বছর। আর পাকিস্তানি সালমান হাফিজ ওরফে আবদুর রহিম গ্রেপ্তার হয়ে আছেন ২০০৬ সাল থেকে। জানা যায়, এরা বিভিন্ন সময়ে মাদকের চোরাচালান, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দেওয়া হয়। আদালতের মাধ্যমে এদের সাজা হয় ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর।
সহকারী কারা মহাপরিদর্শক জান্নাত উল ফরহাদ এ প্রতিবেদককে বলেন, সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমরা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিই। পরে তারা যদি তাদের নাগরিকদের স্বীকৃতি দিয়ে না নিয়ে যায় তাহলে মুক্তি দেওয়ার সুযোগ থাকে না। এসব বন্দি বাংলাদেশের জন্য বোঝা। আর এখন সবচেয়ে বেশি বন্দি আছে ভারতীয় নাগরিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি বন্দিদের বেশির ভাগই কক্সবাজার, কুমিল্লা, বান্দরবান, ঢাকা, কাশিমপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, যশোর ও খুলনা কারাগারে আটক রয়েছেন। আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে পাঠানোর পরই কারা কর্তৃপক্ষ এসব বিদেশি নাগরিকের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। সাজা হওয়ার পরও কারা কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তা অবহিত করে। সাজা শেষে বন্দিরা যাতে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আটক বন্দিদের স্ব-স্ব দেশের ঢাকার দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায় না। এদিকে আটক বন্দিদের বেশির ভাগই বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বিপাকে পড়ে কারা কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, ২০২১ সালে শুধু পদ্মা সেতু এলাকা থেকে ১৬ ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার অভিযোগে শরীয়তপুরের জাজিরা ও মাদারীপুরের শিবচর থানা-পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এ ব্যাপারে ১৩টি মামলা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন নিজের নাম-পরিচয়ও ঠিকমতো বলেননি। ২০১৭ সাল থেকে জাজিরা থানার পদ্মা সেতু এলাকা থেকে ১৫ জন ভারতীয় গ্রেপ্তার হন। তাদের কাছ থেকে কোনো ভিসা কিংবা পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালে একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন ভারতীয় নাগরিক প্রমথ কুমার চঞ্চল ও সঞ্জয় সেন।
মাদারীপুরের শিবচর থানা সূত্র জানায়, ওই বছরই গৌরী নামে এক ভারতীয় নাগরিককে পদ্মা সেতুর কাঁঠালবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সঙ্গে তার একটি বাচ্চাও ছিল।