চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশমুখে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে তিন ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে বন্দর রক্ষা পরিষদ। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনাল নিয়ে করা চুক্তি এবং নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়ার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। ওইদিন মহানগরের তিন স্পট আগ্রাবাদ, সিমেন্স হোস্টেল ও বড়পুল এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে একই দাবিতে আগামী বুধবার সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা বন্দরের প্রবেশমুখ আগ্রাবাদ, বড়পুল ও মাইলের মাথা এলাকায় সড়ক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জুলাই-বিপ্লব হলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কনভেনশন থেকে স্কপ নেতারা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্কপের কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার এবং সঞ্চালনা করেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান খান। প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
এ ছাড়া শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্তসহ কেন্দ্রীয় স্কপ নেতা আবদুল কাদের হাওলাদার, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, সাইফুজ্জামান বাদশা, আহসান হাবিব বুলবুল ও এ এ এম ফয়েজ হোসেন বক্তব্য দেন।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিরাষ্ট্রীয়করণ, পাটকল ইজারা, সরকারি কলকারখানা বন্ধ এবং শ্রমিক অধিকারের বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে একটি জাতীয় ইশতেহার প্রয়োজন।’ তিনি ব্যবসায়ীদেরও বন্দর রক্ষার আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কনভেনশন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক স্থাপনা এনসিটিসহ কোনো স্থাপনা দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি, শ্রমিক ও বন্দরনির্ভর মানুষের জীবিকার জন্য হুমকি এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কনভেনশন থেকে আরও ঘোষণা করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরসহ সব লাভজনক স্থাপনা ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনালসংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করতে হবে।
অবরোধের ঘোষণা দিয়ে কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, ‘বন্দর এলাকায় সভাসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এভাবে আমাদের কর্মসূচি বানচাল করা যাবে না। বরং আরও কঠিন থেকে কঠিন কর্মসূচি দিয়ে আমরা বন্দর ইজারা দেওয়ার ষড়যন্ত্র রুখে দেব।’ তিনি গোপন চুক্তির মাধ্যমে লালদিয়ার চর এবং পানগাঁও ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তপন দত্ত বলেন, ‘২৬ নভেম্বরের অবরোধ কঠোর কর্মসূচির সূচনা। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে শাটডাউন বা হরতালের মতো আরও কঠোর কর্মসূচিও দেওয়া হবে।’
এদিকে বন্দর রক্ষা পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রামের আহ্বায়ক হাসান মারুফ রুমী, বন্দর রক্ষা পরিষদের সদস্যসচিব মো. হুমায়ুন কবীর, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোজাহের হোসেন শওকত প্রমুখ।
হাসান মারুফ রুমী বলেন, ‘দেশের সম্পদের মালিক জনগণ। তাদের না জানিয়ে কোনো চুক্তি করা যাবে না। সেটা জুলাই সনদেও উল্লেখ আছে। সনদে বলা আছে-বিদেশিদের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে গেলে সেটা অপ্রকাশ্যে করা যাবে না।’