ভয়াবহ ভূমিকম্প কেড়ে নিয়েছে ১০টি তাজা প্রাণ। নিহতদের পরিবারে মাতম থামছেই না। পরিবারগুলো যেন শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। নিহতদের স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী- সবাই শোকে বিহ্বল। ভূমিকম্পে এই অকালমৃত্যুতে শেষ হয়ে গেছে অনেকগুলো সম্ভাবনা। গতকাল নিহতদের নিজ নিজ এলাকায় দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া জানান, ঢাকায় নিহত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী বগুড়ার রাফিউল ইসলামের (২০) লাশ শুক্রবার রাতেই বগুড়া শহরের সূত্রাপুরের পৈতৃক বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় পুরো মহল্লায় এক বেদনাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুরে বগুড়া শহরের সূত্রাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে নামাজগড় আঞ্জুমান-ই কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত রাফিউল ইসলাম বগুড়া শহরের গোহাইল রোডের সূত্রাপুর এলাকার ওসমান গনির ছেলে। বাবা ওসমান গনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারাম সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। রাফি পরিবারের প্রথম সন্তান।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, পুরান ঢাকায় বংশালের কসাইটুলীতে নিহত লক্ষ্মীপুরের ব্যবসায়ী আবদুর রহিম (৪৮) ও ছেলে আবদুল আজিজ রিমনের (১২) লাশ গতকাল ভোরে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়স্বজন। শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকায়। পরে আস সুন্নাহ মাদরাসা ও মসজিদ কমপ্লেক্স মাঠে নিহতদের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীতে নিহত দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল (৩৮) ও তার ছেলে ওমরের (৯) জানাজা গতকাল কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার উত্তরপাড়া গ্রামের একটি বিদ্যালয়ের মাঠে হয়। পরে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। চাকরির কারণে দেলোয়ার নরসিংদী শহরের গাবতলী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারসহ থাকতেন। ভূমিকম্পের সময় পাশের বাসার একটি দেয়াল ধসে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়। নিহত দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল জুট মিলস করপোরেশনে উচ্চমান সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন। ছেলে ওমর নরসিংদীর একটি মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। তাদের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত দেলোয়ারের দুই মেয়ে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার বিকালে নিহত ১০ মাস বয়সি ছোট শিশু ফাতেমার দাফন সম্পন্ন হয়। ফাতেমার সঙ্গে গুরুতর আহত মা কুলসুম বেগমকে নিয়ে বাবা আ. হক হাসপাতালে ব্যস্ত থাকায় দাফন-কাফন ও শেষ বিদায়ের সময় পাশে থাকতে পারেননি তারা। ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে নিহত শিশু ফাতেমার মা কুলসুম বেগম ফাতেমাকে নিয়ে ভুলতাস্ত তার বাবার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হঠাৎ ভূমিকম্পের কম্পনে রাস্তার পাশে বাউন্ডারি উঁচু দেয়াল ভেঙে পড়ে ঝড়ের গতিতে। এ সময় শিশু ফাতেমা ও কুলসুম বেগম দেয়ালচাপা পড়েন। লোকজন তাদের উদ্ধার করলে ঘটনাস্থলেই শিশু ফাতেমার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গুরুতর আহত হন শিশুটির মা কুলসুম বেগম।
শিশুটির বাবা আ. হক আজাহারি করতে করতে বলেন, প্রাণের টুকরারে দাফন করার সময় একবারও দেখতে পারলাম না। কোলে নিতে পারলাম না। আল্লাহ, এমন দিন যেন কোনো বাবার ভাগ্যে না আসে। এদিকে শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রূপগঞ্জ ইউএনও সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, উপজেলার অনেক ভবন ও প্রাচীর নিয়ম না মেনে নির্মাণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হবে।