প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল ঢাকায় এসেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। বিকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য, জ্বালানি, শিক্ষা, পর্যটন, ইন্টারনেট সহযোগিতা, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ, জলসম্পদ, বিনিয়োগ ও বিমান যোগাযোগসহ বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্কের সব প্রধান ক্ষেত্র নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। এ সময় দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভুটানের ভাগ্য একসঙ্গে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন দুই নেতা। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিনে দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা ও আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সংক্রান্ত দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে এসব সমঝোতা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ বিষয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশের তরফে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান স্মারকে সই করেন। আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ এবং টেলিযোগাযোগ সেবা বাণিজ্য-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের তরফে সই করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবদুন নাসের খান। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে সই ও নথি বিনিময় প্রত্যক্ষ করেন। এর আগে বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী তোবগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পৌঁছালে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথমে দুই নেতা ৩০ মিনিটের একান্ত বৈঠক করেন। এরপর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর দুই সমঝোতা স্মারক সই হয়।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভুটানকে ‘বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভুটান বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গির একটি মূল অংশ। আমাদের ভবিষ্যৎ একসঙ্গে গড়ে উঠবে। ভূগোল ও প্রকৃতি আমাদের কাছে এনেছে, আর আমাদের নিয়তি হলো একসঙ্গে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী তোবগে বলেন, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে উষ্ণ ও অসাধারণ সম্পর্ক বিদ্যমান। দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা গভীর করা প্রয়োজন। আমরা যদি উন্নত হতে চাই, আমাদের একসঙ্গেই সমৃদ্ধ হতে হবে।
দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন দুই নেতা। প্রধানমন্ত্রী তোবগে বলেন, ভুটান যত দ্রুত সম্ভব এফটিএ সই করতে চায় এবং আশা করছে ভুটানই প্রথম দেশ হবে যে বাংলাদেশের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি সম্পন্ন করবে। এর ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভুটানের পণ্য চলাচল সহজ করতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং ভুটানের কনটেইনার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ভুটানের জন্য বরাদ্দ করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেরিং তোবগে। তিনি বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, সিরামিক পণ্য, তৈরি পোশাক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানিতে ভুটান সরকারের আগ্রহের কথা জানান। সন্ধ্যায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর প্রতিনিধিদলের সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন করা হয়। আজ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। সফর শেষে ২৪ নভেম্বর সকালে থিম্পুর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।