দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিজেই গুরুতর অসুস্থতার শিকার। সরকারি হাসপাতালগুলোতে কম খরচে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকা অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে সে ভোগান্তি না থাকলেও চিকিৎসা খরচ নিম্নবিত্ত তো দূরের কথা মধ্যবিত্তদের জন্যও সহনীয় নয়। ফলে চিকিৎসার জন্য ভারত কিংবা থাইল্যান্ড বা চীনে যাওয়াকে অনেকে সাশ্রয়ী বলে ভাবেন। দেশের সরকারি হাসপাতালে মানসম্মত যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে যাচ্ছেতাই অবস্থা। এগুলো পরিচালনার জন্য জনবল থাকলেও কোম্পানি কা মাল দরিয়া মে ঢাল মনোভাবের কারণে রক্ষণাবেক্ষণের অব্যবস্থাপনা ওপেন সিক্রেট। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যন্ত্র নষ্ট থাকায় পাঁচ বছর ধরে এমআরআই পরীক্ষা বন্ধ। কিছুদিন আগে নষ্ট হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমআরআই মেশিন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে এক দশক ধরে অকেজো পড়ে আছে প্রায় ১১ কোটি টাকার ল্যাসিক মেশিন। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে বেশ কিছু যন্ত্র। শুধু ঢাকা নয়, বরিশাল, সাতক্ষীরাসহ বেশ কিছু জায়গায় যন্ত্র নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। রাজশাহীতে পুরো হাসপাতালই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করাতে গিয়ে রোগী ও স্বজনদের গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি টাকা। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঁচ বছর ধরে পড়ে আছে চীন থেকে উপহার পাওয়া এমআরআই মেশিন। মেরামতের অভাবে বাড়ছে রোগীদের ভোগান্তি। এর আগে নষ্ট হয়ে পড়ে ছিল সিটিস্ক্যান মেশিন। সম্প্রতি সে মেশিন মেরামত হলেও ফিল্মসংকটে খুব অল্প পরিমাণে টেস্ট হচ্ছে। রোগীদের টেস্টের জন্য করতে হচ্ছে দীর্ঘদিন অপেক্ষা। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকলে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো লাভবান হয়। রোগী বা তাদের অভিভাবকদের পকেট কেটে নিজেদের পকেট স্ফীত করার সুযোগ পায় তারা। অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি হাসপাতালে প্রতিনিয়ত রোগী ও তাদের অভিভাবকদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এই যাচ্ছেতাই অবস্থার অবসান কাম্য।