স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মানুষের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের। নরসিংদীতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ এ ভূমিকম্পে বাবা-ছেলেসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে জেলার ঘোড়াশালে বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরা মাটি পরীক্ষা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূতত্ত্ব বিভাগ। গতকাল সকালে ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্ম ও পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ধসে পড়া মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাবির ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আ স ম ওবায়দুলাহর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল। পরীক্ষানিরীক্ষা করে কী ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে বা কতটুকু গভীরতা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে দলটি।
সরেজমিন নরসিংদী, পলাশ ও মাধবদী ঘুরে দেখা যায়, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে বহুতল ভবনগুলো। পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ ক্যাম্পাস আঙিনায় মাটি দেবে গেছে। প্রধান ফটকের সামনের একটি টিনশেডের চালাঘরের ভিটি ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্মের ভিতরে মাটিতে ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। সেখানকার মাটি ফেটে আলাদা এবং কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি ফাঁক হয়ে গেছে। ঘোড়াশাল তাপবিদুৎ কেন্দ্রের বেশ কিছু যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয়। এ ছাড়া ঘোড়াশালের ছয়টি বাড়ি ও এস এ প্লাজা নামে একটি সাত তলা শপিং মলে ফাটল ধরে। পাশাপাশি ঘোড়াশাল বাজারে বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকে ইট পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া নরসিংদী শহর, মাধবদী, পলাশ ও ঘোড়াশালে একাধিক ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
পলাশে প্রত্যক্ষদর্শী রফিক আহমেদ বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় নদীর পানি অনেক ওপরে উঠে প্রচ ঢেউ তুলেছিল। আমরা অনেক ভয় পেয়েছিলাম। অনেকক্ষণ পর বুঝতে পেরেছি ভূমিকম্প হয়েছে। তবে জীবনে এমন কম্পন আর কখনো দেখিনি। আতঙ্কিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএল কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরাও। কম্পনের সময় দৌড়াদৌড়ি করে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন।’
প্রাণ কোম্পানির শ্রমিক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি। মনে করেছিলাম বাইরে কোনো ভারী লরি যাচ্ছে। পরে দেখি কারখানার সব ভবন কাঁপছে। এরপর সবাই দৌড়াদৌড়ি করে বেরোতে গিয়ে কয়েকজন আহত হওয়াসহ ভয়ে কয়েকজন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।’
দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদী। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিএস বলছে, কেন্দ্রস্থল নরসিংদী সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে। গুগল ম্যাপ অনুযায়ী, কেন্দ্রস্থল পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা গ্রাম। স্থানটি শীতলক্ষ্যা নদীর পারে। এটি পলাশ উপজেলার অধীন ঘোড়াশাল পৌর শহরের কাছাকাছি। মাধবদীও পলাশ উপজেলার পাশে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষই ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে সব তথ্য পেয়ে যাব। নিহতদের দাফনে সহায়তার জন্য ২৫ হাজার টাকা করে প্রত্যেকের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’