ভীতিকর ভূমিকম্পে গতকাল কাঁপল সারা দেশ। জোরালো ঝাঁকুনিতে দুলে ওঠে ঘরবাড়ি, স্থাপনা। আতঙ্ক ছড়ায় জনমনে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭। যা দেশের ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীগুলোর বাসিন্দাদের জন্য খুবই আতঙ্কজনক। এর উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে এবং ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। ঝাঁকুনিতে অনেক বাসার শেলফ-টেবিল থেকে জিনিসপত্র পড়ে যায়। বিভিন্ন বাড়ির কাচ-পলেস্তারা খসে পড়ে। ভবনে ফাটল দেখা যায়। ভূমিকম্পে দেয়াল-রেলিং ভেঙে হতাহতের খবর আসতে থাকে তাৎক্ষণিকভাবেই। এর সংখ্যা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলা মুশকিল। ভূমিকম্প প্রতিরোধের ক্ষমতা মানুষের আয়ত্তে নেই। এ হলো পরম পরাক্রমশালী প্রকৃতির তাণ্ডব। এ থেকে বাঁচতে প্রাথমিক করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্বিকভাবে বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও, ঝুঁকির দিক দিয়ে খুব ওপরে রয়েছে। যে পরিমাণ শক্তি ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে জমা হয়ে আছে, তা যদি বের হয়, তাহলে ৮ থেকে ৯ মাত্রার পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে। আর তা হবে মহাবিপর্যয়কর। বিশেষত সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা অঞ্চল বরাবরই ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। দেশ বড় কোনো ভূমিকম্পের শিকার হলে, ঘরবাড়ি ভেঙে আহত-নিহত বা চাপা মানুষদের উদ্ধারে আমাদের সক্ষমতা যথেষ্ট শক্তপোক্ত নয়। পুরোনো তো বটেই, অনেক নতুন ভবন, বহুতলও যথাযথ নিয়ম রক্ষা ও ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মিত হয়েছে- তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। দেশজুড়ে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো যেভাবে দায়িত্বহীন প্রক্রিয়ায়, সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর হাতে তৈরি হয়েছে- তা বিশেষ দুশ্চিন্তার কারণ। এ ক্ষেত্রে সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সংস্কার বা পরিত্যক্ত ঘোষণা, নতুন ভবন-ইমারত-স্থাপনা নির্মাণে ভূমিকম্প সহনীয়তায় শতভাগ শর্ত পূরণ নিশ্চিত করা জরুরি। অনভিপ্রেত বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দ্রুত শক্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর জন্য প্রযুক্তি সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ-প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলার কার্যক্রমও নিতে হবে এখনই।