মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রসুল, এটা বিশ্বাস করা ইমানের অংশ। কেউ যদি এটাকে অস্বীকার করে, তাকে ইমানদার বলার সুযোগ নেই। ইসলামের অনেক বিষয় নিয়ে স্কলারদের ভিন্নমত রয়েছে। কিন্তু খতমে নবুয়ত বা রসুলের শেষ নবী হওয়ার বিষয়টি এমন অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত, যা নিয়ে আলেমদের কোনো মতভিন্নতা নেই। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন। তবে তিনি আল্লাহর রসুল ও সর্বশেষ নবী।’ (সুরা আহজাব)
এই আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল ও সর্বশেষ নবী। এরপরও কেউ যদি মনে করে, মুহাম্মদ (সা.) শেষ নবী নন, তার পরও কেউ নবী আসতে পারে, তবে সে এই আয়াত অস্বীকার করার কারণে আর মুসলমানই থাকে না। খতমে নবুয়ত সম্পর্কে অসংখ্য সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর আলোকেও বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।
আবু হোরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, আমি ছয় বিষয়ে নবীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রাপ্ত হয়েছি। ১. আমাকে সারসমৃদ্ধ বাক্য দেওয়া হয়েছে। ২. শত্রুর মনে ভয় নিক্ষেপ করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। ৩. গনিমতের সম্পদ আমার জন্য হালাল করা হয়েছে। ৪. সমগ্র পৃথিবী আমার জন্য পবিত্র ও নামাজের স্থান করা হয়েছে। ৫. আমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছে। ৬. আমার মাধ্যমে নবুয়তের সমাপ্তি ঘটানো হয়েছে (মুসলিম)।
অন্য হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, আমার এবং আমার পূর্বে আগত নবীদের উদাহরণ ওই ব্যক্তির মতো, যে একটি ঘর তৈরি করল। সে ঘরটি খুব সুন্দর ও নিখুঁতভাবে তৈরি করল। শুধু এক কোণের ইট বাকি রাখল। মানুষ সেই ঘরটিকে ঘুরে ঘুরে দেখে এবং বিস্মিত হয়ে বলে, এই ইটটি যদি বসানো হতো, তাহলে ঘরটা পুরোপুরি সম্পূর্ণ হতো! এটা বলে রসুল (সা.) বললেন, আমি সেই ইট এবং আমি-ই শেষ নবী (বোখারি ও মুসলিম)। রসুল (সা.) একবার শাহাদাত ও মধ্যমা আঙুল ফাঁকা করে বললেন, আমাকে এবং কেয়ামতকে এভাবে পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ কেয়ামত এবং রসুল (সা.)-এর আগমনের মাঝামাঝি সময়টা খুবই সংক্ষিপ্ত। তাঁর এবং কেয়ামতের মাঝখানে বিশেষ বড় কোনো ঘটনা ঘটবে না। রসুল (সা.)-এর আনীত শরিয়তই কেয়ামত পর্যন্ত পালিত ও অক্ষুণ্ন শরিয়ত হবে। এই হাদিসের মাধ্যমেও পরোক্ষভাবে রসুলের শেষ নবী হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। ওপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম- কোরআন-হাদিস দ্বারা রসুল (সা.)-এর খতমে নবুয়ত দৃঢ়ভাবে সুপ্রমাণিত। তারপরও রসুল (সা.)-এর যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বহু আল্লাহদ্রোহী নবুয়ত দাবি করেছে। খোদ রসুল (সা.)-এর জীবদ্দশাতেই আসওয়াদ আল-আনসি নামে এক মিথ্যুক ইয়ামেনে নবুয়ত দাবি করে। রসুল (সা.) তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু যুদ্ধের আগেই নিজ স্ত্রীর হাতে সেই প্রতারক নিহত হয়। রসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পরপর মুসাইলামা নামে আরেক ব্যক্তি নবুয়ত দাবি করে। সাহাবারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং যুদ্ধে এই প্রতারক নিহত হয়। এই দুটি ঘটনা থেকে বোঝা যায়, রসুল (সা.) এবং সাহাবারা মিথ্যা নবুয়ত দাবিদারদের বিরুদ্ধে কতটা কঠোর ছিলেন। এদের এই প্রতারণার খবর বহু আগেই ওহির মাধ্যমে অবগত হয়েছিলেন রসুল (সা.)। তিনি তাই এদের বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেছেন, কেয়ামত কায়েম হবে না, যতক্ষণ না প্রায় ৩০ জন দাজ্জাল, মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে। প্রত্যেকেই দাবি করবে সে আল্লাহর রসুল (বোখারি, মুসলিম)।
সর্বশেষ ভারতের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান অঞ্চলের গোলাম আহমদ নামক এক ব্যক্তি নবুয়ত দাবি করে। বর্তমানে আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামে যারা পরিচিত, তারা এই গোলাম আহমাদ কাদিয়ানির অনুসারী। শুরু থেকেই এই উপমহাদেশের আলেমরা গোলাম আহমদের এই ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এসেছেন। এখনো সেই প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করলেও বাংলাদেশে তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়নি। অনেকে বলবেন, তারা তাদের মতো থাকুক। তাদের অমুসলিম ঘোষণার কী প্রয়োজন! তারা নিজেদের পরিচয়ে, অর্থাৎ অমুসলিম বা কাদিয়ানি হয়ে বসবাস করলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারা মুসলিম পরিচয়ে আহমদিয়া মুসলিম নাম ধারণ করে সাধারণ মুসলমানকে পথভ্রষ্ট করছে। এটা এক ধরনের প্রতারণা। এই ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড দেশের স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি।
রসুল (সা.)-এর মদিনা রাষ্ট্রে অনেক অমুসলিম বসবাস করত। মুসলমানরা তাদের নিরাপত্তা দিতেন। কিন্তু আসওয়াদ আল-আনসি এবং মুসাইলামা কাজ্জাব নবুয়ত দাবি করলে সেই মুসলমানরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেন। কারণ ওই ভণ্ড প্রতারকরা মুসলমান নাম ধারণ করে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছিল। তাই কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
জুমার মিম্বর থেকে
গ্রন্থনা : সাব্বির জাদিদ