১৯৫১ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জের বক্সনগর গ্রামে জন্ম। পুরো নাম আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন। একই সঙ্গে অভিনেতা, অ্যাকশন ডিরেক্টর, প্রযোজক, পরিবেশক। প্রথম ছবি ‘দেবর’ এবং অ্যাকশন ডিরেক্টর ‘রংবাজ’ ছবিতে। নায়ক হিসেবে প্রথম ছবি ‘মোকাবেলা।’ পড়াশোনা বিএ অনার্স। প্রথম স্ত্রী অভিনেত্রী সুচরিতা, দ্বিতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী নাসরিন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে। জসিম-নাসরিন দম্পতির তিন ছেলে- সামি, রাতুল ও রাহুল সংগীতের সঙ্গে যুক্ত।
ভয়ংকর জসিম
ভিলেন জসিম ভয়ংকর এক জসিম। একই সঙ্গে ভয় দেখায় আবার বিনোদন দেয় কথার মারপ্যাঁচে। ‘দোস্ত দুশমন’-এর খোঁচা খোঁচা দাড়ির জসিম যেমন ভয়ংকর কথা বলে আবার সুরে সুরে ছন্দ মিলিয়ে নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করতে বিনোদনও দেয়। এমনটা দেখা যায় না। খোদ বলিউডের অভিনেতা আমজাদ খান ‘শোলে’-এর রিমেকের এ ছবিতে জসিমের অভিনয়ের প্রশংসা করেন বলে জানা যায়। দলের সর্দার গাব্বার সিং জসিম অপারেশন থেকে ফেরত আসা সহযোদ্ধাদের মজার ছলে গুলি করে মারে। ‘লাইলি মজনু’ ছবির জসিম আরও ভয়ংকর। রাজ্জাক-ববিতার প্রেমের পথে কাঁটা। সেই জসিম পরে হলো নায়ক জসিম। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়াই ছিল জসিমের কাজ।
পাঁচ সেরি ঘুসি
‘জসিমের এক একটা ঘুসি নাকি পাঁচ সেরি ওজনের ছিল।’ একবার যার গায়ে পড়বে তার উঠে দাঁড়ানোটা মুশকিল। জসিমের ঘুসির সঙ্গে মুখের আওয়াজও আসে আর ওই আওয়াজটা তো আসে তার মুখের ‘ভিসুএইক।’ এটা ছিল নিজস্বতা। কিংবদন্তি অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান একবার স্মৃতিচারণায় বলেছিলেন, জসিম তাকে দেখিয়ে দেওয়ার পরেও ভুল করাতে ঘুসি খেতে হয়েছিল তারপর শুটিং প্যাকআপ করতে হয়েছে।
অনবদ্য যত সিকোয়েন্স।

লটারি জসিম
এখনো মনে আছে ক্লাবে জসিমের সিনেমা দেখার সময় জসিম বের হলেই সবাই বলে উঠত ‘লটারি জসিম।’ দেখতে দেখতে কেউ কেউ বলত, ‘আজকে আরও বেশি টাকার লটারি জিতবরে।’ অনেক ছবিতে লটারি জিতেছিল জসিম কিন্তু ভাগ্যটা বেজায় খারাপ। কারণ লটারি জিতে টাকা হাতে যেই বাড়ি ফেরে রাস্তায় ওত পেতে থাকে গুন্ডার দল আর কেড়ে নেয় সব। জসিমও ওদের উচিত শিক্ষাটা দিয়ে দেয়। হঠাৎ চলে না গেলে আরও অনেক সিনেমাতেই হয়তো লটারি জিতত আর গিনেসে নামটা উঠলেও উঠতে পারত। এ ছাড়া রক্ত নিয়ে ফেরার সময়ও গুন্ডারা তাকে আক্রমণ করত।
জসিম ও রাজু
জসিমের পর্দা নাম।
সবচেয়ে বেশি ছিল ‘রাজু’। রাজু বললেই সবাই বলত, ওটা তো জসিমের নাম।
মুক্তিযোদ্ধা জসিম
জসিম দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। এ বিষয়টি তাকে আলাদাভাবে সম্মানের জায়গায় রেখেছে মানুষের মনে।
জসিম ফ্লোর
চলচ্চিত্রে অনেক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জসিমের নামে এফডিসির ২ নম্বর শুটিং ফ্লোরের নামকরণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসিম ফ্লোর।
মৃত্যু
১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মাত্র ৪৭ বছর বয়সে কিংবদন্তি অভিনেতা জসিম আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যান।