নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও বিশ্বের জাহাজভাঙা শিল্পে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। কিন্তু এ খাতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারত সরকার শিগগিরই সে দেশের জাহাজভাঙা শিল্প চাঙা করতে ৪৫৪ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৫ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা) প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ, এনডিটিভিসহ একাধিক গণমাধ্যম। মূলত বাংলাদেশের বাজার দখলে নিতেই এ পরিকল্পনা বলে খবরে বলা হয়েছে। ভারতের এ উদ্যোগ বাংলাদেশে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে চিন্তিত এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘আমরা এমনিতেই সংকটে আছি। দেশে ইস্পাতের চাহিদা কমে যাওয়ায় লোহার চাহিদা ও দাম কমে গেছে। এখন জাহাজের লোহা কাটতে গিয়ে যে খরচ পড়ছে সে দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে সরকারি নানান জটিলতা, এলসি ও ডলারসংকটে পুরাতন জাহাজের আমদানি এবং সচল ইয়ার্ডের সংখ্যা কমে গেছে। ভারতের এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ গভীর সংকটে পড়বে।’
বিএসবিআরএ সূত্র জানান, একসময় সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় অঞ্চলে ১১৬টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড সক্রিয় ছিল। যদিও সংগঠনটির প্রাথমিক অনুমোদিত ইয়ার্ড ছিল ১০৫টি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে নানান সংকটে বেশির ভাগ ইয়ার্ডই বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ১৭টি গ্রিন শিপ ব্রেকিং
ইয়ার্ডসহ ২০-২৫টি ইয়ার্ড কোনোভাবে টিকে আছে। এর মধ্যে কয়েকটি গ্রিন ইয়ার্ডও সাম্প্রতিক সময়ে নিষ্ক্রিয় আছে।
ব্লুমবার্গ ও ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জাহাজভাঙা শিল্প চাঙা করতে ভারত ৪৫৪ মিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে দেশটি এ খাতে শীর্ষস্থানে থাকা বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী পাকিস্তানের বাজার নিজেদের দখলে নিতে চাইছে। ২০২৬ সাল থেকে ১০ বছরের জন্য এ আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে। চলতি মাসে অথবা শিগগিরই ভারতের মন্ত্রিসভা প্রস্তাবটি অনুমোদন দিতে পারে। যদিও সরকারি পর্যায় থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ হয়নি। খবর অনুযায়ী, এ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ভারতের ব্যবসায়ীরা ‘ক্রেডিট নোট’-এর সুবিধা পাবেন। এটি ব্যবহার করে ভাঙার জন্য পুরাতন জাহাজ আনলে স্ক্র্যাপ মূল্যের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হবে। এ ছাড়া বৈশ্বিক বাজারে আধিপত্য তৈরিতে ভারত তার পূর্ব উপকূলে আরও একটি নতুন জাহাজভাঙার কেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবছে।
বিএসবিআরএর সহসভাপতি, পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় সেক্টর লিডার হিসেবে থাকলেও করোনা মহামারির সময় থেকে নানান কারণে এ শিল্পে দুরবস্থা বিরাজ করছে। এর সঙ্গে পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের নানা রকম হয়রানি তো আছেই। এ অবস্থায় ভারত যদি সে দেশের ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয় তাহলে বাংলাদেশের বাজার সেখানে চলে যাবে, ভারতীয়রা খুব সহজে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পুরাতন জাহাজ কিনতে পারবে।’