নদী ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন উদ্যোগ নেয়নি। তাই ক্রমেই সুগন্ধা নদীতে বিলিন হচ্ছে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠী গ্রাম। ভাঙতে ভাঙতে ক্ষুদ্রকাঠী গ্রাম আরো ক্ষুদ্র হচ্ছে। শুধু বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর ফসলী জমিই নয়, নদী ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে বরিশালের রহমতপুর-মীরগঞ্জ-মুলাদী-হিজলা সড়ক।
সড়কটি নদীতে বিলীন হলে বন্ধ হয়ে যাবে বিভাগীয় সদরের সাথে তিন উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। তাই নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্বেচ্ছায় নেমে পড়েছেন ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের মানুষ। কেউ বাঁশ, কেউ ইট, কেউ নগদ অর্থ, আবার কেউ স্বেচ্ছশ্রম দিচ্ছেন নদী ভাঙন প্রতিরোধের কাজে।
স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ইট ভর্তি দুই শতাধিক খাঁচা (পার্কোপাইন- বিশেষ প্রযুক্তিতে ইটভর্তি বাঁশের খাঁচা) তৈরি করে ফেলা হবে নদীতে। এভাবেই বাবুগঞ্জ উপজেলার সুগন্ধা নদীর ভাংগনের কবল থেকে রহমতপুর-মীরগঞ্জ-মুলাদী সড়ক রক্ষায় গত শনিবার থেকে একজোট হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ শুরু করছেন ওই এলাকার কয়েক শ’ মানুষ।
বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের ভ্যানচালক খলিল মিয়া নিজের ভ্যান গাড়িতে বাঁশ টেনে নদী পাড়ে নিয়ে জড়ো করছেন। তার সঙ্গে সহযোগিতা করছেন আরো অনেক ভ্যান চালক এবং স্থানীয় বাসিন্দা।
আরেক ভ্যান চালক আব্দুল হালিম জানান, বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর-মীরগঞ্জ-মুলাদী প্রধান সড়কটি সুগন্ধা নদীর ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। তাই নদী ভাঙন প্রতিরোধে যে যেভাবে পাড়ছে সহযোগিতা করছে। তিনি নিজে নগদ অর্থ টাকা দিতে পারেননি, তাই ভ্যান নিয়ে নিজেই কাজে নেমে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা অধ্যাপক মো. গোলাম হোসেন জানান, মাহাবুব হোসেন নামে ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের এক ব্যবসায়ী নদী ভাঙন প্রতিরোধে গ্রামবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর পুরো গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্বেচ্ছায় নেমে পড়েন। তাদের সহযোগীতা করেন স্থানীয় এমপি শেখ টিপু সুলতান এবং বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায়।
নদী ভাঙন প্রতিরোধ কাজের উদ্যোক্তা মাহাবুব হোসেন জানান, সুগন্ধা নদীর ভাংগনে উপজেলার সবেচেয়ে বড় ক্ষুদ্রকাঠী গ্রাম ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। বিভাগীয় সদর বরিশাল থেকে সড়ক পথে বাবুগঞ্জ, মুলাদী ও হিজলা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান সড়কটিও হুমকীতে পড়েছে।
তাই ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের অবশিষ্ট ভূমি এবং উপজেলার প্রধান পাকা সড়কটি রক্ষায় কাজ শুরু করেছেন তারা। প্রথম ধাপে কয়েকশ পার্কোপাইন (ইটভর্তি বাঁশের খাঁচা) তৈরী করে নদীতে ফেলা হবে। একাজে কেউ বাঁশ, কেউ ইট, কেউ লোহার পেরেক, কেউ নগদ টাকা আবার কেউ দিচ্ছেন বিনামূল্যে শ্রম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্বেচ্ছাশ্রমের এমন উদ্যোগ অনুকরণীয়। তিনি ওই উদ্যোগের সাথে আছেন। তবে ওই পয়েন্টে স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে বড় প্রকল্প নেওয়া দরকার। পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও সেখানকার ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দেয়ার কথা বলেন তিনি।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট শেখ টিপু সুলতান জানান, সুগন্ধা নদীর ভাংগন প্রতিরোধে ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামে কোন প্রকল্প নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। সহায়-সম্বল রক্ষায় বাধ্য হয়েই এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সড়ক রক্ষার কাজে নেমেছেন। তিনি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে ওই উদ্যোগে সহায়তা দিচ্ছেন। স্থায়ীভাবে নদী ভাংগন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রকল্প গ্রহণের জন্য ডিও লেটার দেয়ার কথা বলেন স্থানীয় এমপি টিপু।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ জানান, বাবুগঞ্জের ক্ষুদ্রকাঠী এলাকায় সুগন্ধা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে গ্রামবাসী স্বেচ্ছা ভিত্তিতে কাজ করছেন বলে তিনি শুনেছেন। স্থানীয় এমপি ওই স্থানে নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প নেওয়ার জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছেন। পাউবো কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে সুগন্ধ নদীর ভাঙন থেকে ক্ষুদ্রকাঠী গ্রাম রক্ষায় ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। একই সাথে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে নদী ভাঙন প্রতিরোধের কাজেও কারিগরি সহায়তা দেয়ার কথা বলেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/ ০২ জুলাই, ২০১৭/ ই জাহান