সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ট্রাক চালক উৎপল রঞ্জন ভদ্র হত্যার সঠিক তদন্ত ও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি জানিয়েছেন তার বাবা-মা ও স্বজনেরা। আজ স্থানীয় একটি পত্রিকা অফিসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উৎপলের বাবা বাবলু রঞ্জন ভদ্র ও মা স্বপ্না রানী ভদ্র কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ছেলে উৎপল রঞ্জন ভদ্র উল্লাপাড়ার আমান ফিড মিলের ফিডে ট্রাক চালক হিসেব কর্মরত ছিল। প্রায় আট বছর পূর্বে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে। তার ঘরে দুটি ফুটে ফুটে কন্যা সন্তান রয়েছে। ধর্মান্তরিত হলেও সে আমাদের দু'জনকে বাবা-মা হিসেবে শ্রদ্ধা-ভক্তি ও সংসারের ব্যয়ভার বহন করত। উৎপল সঠিকভাবে কাজ করায় নয়নগাঁতী গ্রামের বাসিন্দা ও উল্লাপাড়ার আমান ফিডের ট্রাকের দালাল গ্রুপের প্রধান রোস্তম ও তার ছেলে ইমন, ইমরান ও আসলাম শত্রুতা শুরু করেন। এ অবস্থায় গত মাসের ২৪ জুন ইমন বগুড়ার যাবার কথা বলে কৌশলে উৎপলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। বগুড়া থেকে ফেরার পথে চান্দাইকোনার অদুরে তাকে মারপিট করে ইমন একটি মাইক্রোযোগে তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে আমরা চান্দাইকোনা হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে অবস্থা গুরুত্বর হলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ভোর পাঁচটায় উৎপল মারা যায়। পরে বগুড়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরুতহাল প্রতিবেদন করে লাশ ময়নাতদন্ত করেন। সুরুতহাল প্রতিবেদনে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম-দুপায়ের হাটু থেকে পাতা পর্যন্ত ভাঙ্গাসহ হত্যাজনিত কান্ড উল্লেখ করা হয়েছে।
উৎপলের বড় বোন তাপসী রানী জানান, মৃত্যুর পরই উল্লাপাড়া থানায় মামলা করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান কৌশিক আহমেদ বিষয়টি দুর্ঘটনায় বলে আখ্যায়িত করে উল্টা আমাদের গালাগাল করে। হিন্দু বলে বিচার পাবনা এমন কথা বলায় ওসি বলেন, ‘বিচার পাও না, তাহলে ইন্ডিয়া চলে যাও।’ বিষয়টি স্থানীয় হিন্দু প্রতিনিধি, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে বাধ্য হয়ে কোর্টে ইমন, ইমরান, আসলাম ও তারা বাবাসহ ১০জনের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে উল্লাপাড়ার থানার ওসিকে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের স্বজনরা জানান, যে ওসি মামলা না দিয়ে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দিয়েছে, সেই ওসির উপর তদন্ত ভার দেয়ায় সঠিক তদন্ত নিয়ে আমরা শঙ্কা রয়েছি। এছাড়াও আসামিদের সাথে ওসির সুসম্পর্ক রয়েছে। স্বজনরা আরো বলেন, আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিলেও ওসি এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। এ অবস্থায় মামলাটি যাতে সুষ্ঠ তদন্ত এবং প্রকৃত খুনিরা যাতে ধরা পড়ে সে জন্য প্রশাসনের উচ্চমহলসহ প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান কৌশিক আহমেদ জানান, ‘বিচার পাও না-ইন্ডিয়া যাও’এ ধরনের কোন কথা বলা হয়নি। তাদেরকে বলা হয়েছে, ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা, তাছাড়া ঘটনাটি শেরপুর থানার মধ্যে রয়েছে, সে কারণে মামলাটি শেরপুর থানায় করতে হবে-এক্ষেত্রে কোন সমস্যা হলে শুধু এটুকু বলা হয়েছে। তিনি আরো জানান, যেহেতু আদালতে হত্যা মামলা হয়েছে। আদালতে থেকে তদন্তে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার