২৬ জুন, ২০২০ ১২:৫৯

রিফাত শরীফ হত্যার এক বছর, মুসার খোঁজ মেলেনি আজও!

মোঃ হাসানুর রহমান ঝন্টু

রিফাত শরীফ হত্যার এক বছর, মুসার খোঁজ মেলেনি আজও!

বরগুনা শহরের সরকারি কলেজ গেটের সামনে ২০১৯ সালের ২৬ জুন প্রকাশ্যে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করার পর নিহত রিফাত শরীফ হত্যার আজ এক বছর। রিফাত শরীফের হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ২৪ জনকে আসামি করে পুলিশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য আর রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ পুত্রবধূ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রধান স্বাক্ষী করে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী তার ভাই সিফাত ফরাজীসহ কয়েকজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। 

কয়েকদিনের মধ্যই রিফাত শরীফ হত্যার নাটকীয় মোড় নেয়। পুলিশ নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মিন্নির বাবার বাড়িতে পুলিশ ক্যাম্প বসিয়ে মিন্নিকে মূলত গৃহবন্দী করে। ১৭ জুলাই ২০১৯ আসামিদের শনাক্ত করা এবং জিজ্ঞাসাবাদের নামে পুলিশ বাড়ি থেকে পুলিশ লাইনে তার বাবাকে সহ নিয়ে আসে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মহল মিন্নির পক্ষে আইনজীবীদের আদালতে না দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়ে অবস্থান নিলে আলোড়ন সৃষ্টি হয় মিডিয়া জুড়ে। এই আহ্বানকে উপেক্ষা করে আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আ্যাডঃ মাহবুবুল বারী আসলাম ১৮/৭/২০১৯ তারিখে মিন্নির জামিনের আবেদন করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিস্টেট আদালতে। আদালত জামিন আবেদন না মন্জ্ঞুর করে রাষ্ট্র পক্ষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় রিমান্ডে নিয়ে মিন্নিকে জোর পূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ আনেন। ১৯ জুলাই মিন্নিকে আদালতে হাজির করে তার স্বীকারোক্তি রেকর্ড শেষে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। ২৪ আসামির মধ্য একজন মুসাকে পলাতক দেখানো হয়। প্রশ্ন উঠে শিশু অপরাধী মুসা কি আদৌ বেঁচে আছে? নাকি নয়নের ভাগ্যই বহন করতে হয়েছে মুসাকে? পুলিশ মুসাকে পলাতক দেখিয়েই নীরব! 

২ জুলাই হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) হুমাউন কবির দুটি ভাগে ২৪ জনের বিরুদ্ধে ১/৯/২০১৯ তারিখ আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলা বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ও শিশু আদালতে স্থানান্তরিত হয়। শিশু আদালতে ১৪ জন আসামির মধ্যে ৭জন জামিনে রয়েছে। অপর ৭জন বরগুনা কারাগারে সংশোধনাগারে রয়েছে। শিশু আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ব্যতীত ৭৫ জনের সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়েছে। 

শিশু আদালতের পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, করোনার কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ করা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত যে স্বাক্ষী হয়েছে তাতে আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছি। অপর দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ জনের মধ্য মিন্নি ব্যাতীত ৯ জন কারাগারে আছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা সহ  ৭৬ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ৬/৪/২০২০ তারিখ নির্ধারণ ছিলো। 

রাষ্ট্রপক্ষের পিপি ভূবন চন্দ্র হালদার বলেন, আদালতে যে সাক্ষ্যসহ তথ্য উপাত্ত আমরা উপস্থাপন করেছি তাতে আশা করছি আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। 

নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মামলার আলোচিত আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী ও তথ্যর ভিত্তিতে মিন্নি নির্দোষ প্রমাণিত হবে আশা করছি। 

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আমাদের মেয়ে যে স্বামীকে বাঁচানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে আদালতের কাছে আইনজীবী সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। আদালতে ইনশাল্লাহ আমরা ন্যায় বিচার পাব মিন্নির নির্দোষ প্রমাণিত হবে। 

নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল ফরাজি সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে সঠিক ভাবে সাক্ষ্য প্রমান তুলে ধরতে পেরেছেন। আদালত আশা করবো ন্যায় বিচার করবে এবং আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর