বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার মাঠে মাঠে এখন পাকা ধান। তবে শ্রমিক সঙ্কটে ধান কাটতে পারছেন না কৃষক। পাইকারী বাজারে প্রতিমণ ভেজা ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০-৯০০ টাকায়। যা গত বছরের থেকে প্রায় ২০০ টাকা কম দর। আর একজন শ্রমিককেই দৈনিক মজুরিও দিতে হচ্ছে ৮৫০ টাকার মতো। তবু মিলছে না শ্রমিক। সব মিলিয়ে বোরো ধান নিয়ে অসন্তুষ্ট কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি ইরি বোরো মৌসুমে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন মিলে ১২ হাজার ৪ শত ৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে জিরাশাইল, ব্রি ধান-২৮, ২৯ ও উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানসহ বেশ কয়েক জাতের ধান চাষ করেন কৃষকরা। তবে বৈশাখ মাসের প্রথম থেকেই উপজেলায় মাঝে মঝে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিপাতের কারনে অনেক কৃষক তড়িঘড়ি করে ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যেই ঝড় বৃষ্টিতে পাকা ও আধা পাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়ে ধান গাছে পচন ও ধানে চারা গজাতে শুরু করেছে। ফলে অনেকেই ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে শ্রমিক নিয়ে আধাপাকা ধান কাটছেন। তারপরও কৃষি শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার বৃহৎ জংশন স্টেশন সান্তাহারে কৃষি শ্রমিকরা ট্রেনযোগে এসে নামামাত্র কৃষকরা তাদের কাছে ভিড় জমাচ্ছেন। এদিকে দূর্যোগপূূর্ণ আবহাওয়া থাকা সত্তে¡ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এবছরও আবাদ অনেকটাই ভালো হয়েছে।
উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের কায়েতপাড়া গ্রামের শফির উদ্দীন, রায়হান হোসেন ও নাহিদ জানান, মজুরি হিসেবে এক মণ ধানের দাম দিয়েও মিলছে না একজন শ্রমিক। শ্রমিক মিললেও জনপ্রতি মজুরি দিতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। সঙ্গে থাকছে আবার দুই বেলা খাবার। অন্যান্য খরচ তো আছেই। চলতি বোরো মৌসুমে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া দমদমা গ্রামের গুলজার রহমান বলেন, দুই বিঘা জমিতে তিনি ধান লাগিয়েছেন। শ্রমিক না পাওয়ায় নিজেরাই ধান কাটতে নেমে গেছেন।
উপজেলার নিমাইদীঘির আখতারুজ্জামান হিটলার নামের আরেক কৃষক জানান, কমবেশি সব এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তাই শ্রমিকদের চাহিদা বেশি। ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নীলফামারি জেলা থেকে কিছু শ্রমিক এনে তাদের সঙ্গে নিজেরাও ধান কাটছেন।
উপজেলার ছাতিয়ানগ্রামের ধান ব্যবসায়ী মিলন হোসেন বলেন, ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে ধানের দাম গত বছরের চেয়ে মণপ্রতি (ভোজা) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে কিনছি। এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে ভেজা প্রতি মণ ধান কিনছি ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা দরে। শুকনা ধান প্রতিমণ ১০০০ থেকে ১০৫০ টাকা। যা গত বছর ছিল ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারি জানান, এবার উপজেলায় ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তবে ভেজা ধানের দাম কম, তিনি ধানগুলো রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে বিক্রির জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। যাতে কৃষকরা ভালো দাম পান এবং লাভবান হন।
বিডি প্রতিদিন/এএম