স্বরস্বতী পূজাকে ঘিরে বৃহস্পতিবার চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ঐতিহ্যবাহী দই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দিনব্যাপী তাড়াশ বাজারে এ মেলার আয়োজন করা হয়। দই মেলাকে ঘিরে এলাকায় হিন্দু-মুসলিম সকলের মাঝেই সাজসাজ রব পড়ে যায়।
মেলাকে ঘিরে দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজনরা বেড়াতে আসায় যেন স্বজনদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। মেলায় বগুড়ার শেরপুর, চান্দাইকোনা, বেলকুচি, শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি দই ব্যবসায়ী দোকান নিয়ে বসে। সঙ্গে রয়েছে চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, কদমাসহ হরেক রকম মুখরোচক খাবার ও খেলনার দোকান। স্বাদের ভিন্নতার সাথে হরেক রকম দইয়ের নামও রয়েছে। যেমন-ক্ষীরসা দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, রাজাপুরের দই ও শ্রীপুরী দই।
তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সভাপতি সঞ্জিত কর্মকার জানান, তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। জনশ্রতি রয়েছে, জমিদার রাজা রায় বাহাদুর নিজেও দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। তাই জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করতেন। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দই মেলার প্রচলন শুরু হয়। এছাড়াও স্বরস্বতী পুজা উপলক্ষে শহরের মুজিব সড়কেও প্রতি বছরের ন্যায় এবারো দই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কথিত আছে সবচেয়ে ভাল সুস্বাদু দই তৈরি কারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করা রেওয়াজ ছিল।
দই ব্যবসায়ী গোবিন্দ ঘোষ ও কার্ত্তিক ঘোষ জানান, প্রায় আড়াইশ বছর ধরে প্রতি স্বরসতী পুজায় এ মেলার আয়োজন করা হয়। এবারের মেলায় বিকিকিনি ভাল হচ্ছে বলেও ব্যবসায়ীরা জানান।
স্থানীয় দই বিক্রেতা উজ্জল ঘোষ বলেন, দুধের দাম, জ্বালানী, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারনে দইয়ের দামও বৃদ্ধিও পাচ্ছে। তবে চাহিদা থাকার কারনে কোন ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না।
দুই ব্যবসায়ী রনজিত ঘোষ জানান, দশ মণ দই নিয়ে এসেছিলাম। দইয়ের চাহিদা থাকায় দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। রাজাপুর গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, জেলার বেলকুচি উপজেলার রাজাপুরের দইয়ের একটা সুনাম রয়েছে। তাই আমাদের দইয়ের চাহিদা বেশি। মেলা এক দিনব্যাপী হওয়ায় কোনো ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না।
রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে আসা দই বিক্রেতা দিলীপ ঘোষ জানান, বাপ-দাদার আমল থেকেই তিনি দই নিয়ে মেলায় আসেন। প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ মণ দই বিক্রি করা হয়।
দই কিনতে আসা সুরঞ্জিত, মহাদেব, নিপীন রায় জানান, প্রতি বছর সকালে এই মেলা থেকে শুধু হিন্দু সম্প্রদায় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন দই কিনে থাকে। মেলাকে ঘিরে হিন্দু-মুসলিম সকলেই মধ্যেই উৎসব বিরাজ করে।
সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু জানান, শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ দই মেলা বসে থাকে। সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার এই মেলা প্রায় আড়াইশো বছরের ঐতিহ্য।
বিডি প্রতিদিন/এএম