কক্সবাজারের টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপে বৈরী আবহাওয়া ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানির আঘাতে ১৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত বেড়িবাঁধের অন্তত ১৫টি স্থানে সিসি ব্লক ধসে পড়েছে। এতে বেড়িবাঁধের টেকসই ও স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধে ধস ও বেড়িবাঁধ টপকে কয়েকটি গ্রামে বসতবাড়িতে পানি ঢোকে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রায় ৪০ হাজার বাসিন্দাদের মধ্যে।
স্থানীয় আবদুল গনি বলেন, এ কেমন ব্লক, সামান্য জোয়ারের পানির ধাক্কায় ভেঙে যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস হলে অবস্থা কী হবে! আবারো কী তাহলে শাহপরীর দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষের কপালে দুঃখ ঘনিয়ে আসছে। এ খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন একনজর দেখতে ভিড় করছেন বেড়িবাঁধে।
তবে পাউবো কর্তৃপক্ষের দাবি, পূর্ণিমার জোয়ার ও বর্ষা মৌসুমে পানির ধাক্কার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আবার নতুন করে সিসি ব্লক স্থাপন করার জন্য বিশেষ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সিসি ব্লক নির্মাণ ও বাঁধের ব্লকগুলো প্রতিস্থাপন করার কাজ শুরু করবে।
পাউবো সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২২ জুলাই জোয়ারের তোড়ে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বেড়িবাঁধের তিন কিলোমিটার সাগরে বিলীন হয়। ভেঙে পড়ে টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কটি। এতে কয়েকশ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট ২ দশমিক ৬৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারে বিপরীতে প্রথমে ১০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। প্রকল্পে দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয় অতিরিক্ত আরও ৪০ কোটি টাকা এবং তৃতীয় দফায় নকশাঁর ত্রুটির জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয় আরও ৫ কোটি টাকা।
রবিবার সরেজমিন দেখা গেছে, শাহপরীর দ্বীপ তিনরাস্তার মাথার এলজিইডির সংযোগ সড়ক দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে বেড়িবাঁধের অবস্থান। বাঁধের পূর্বপাশের আবুল হোসেনের বাড়ি সংলগ্ন এলাকা থেকে দক্ষিণপাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১৫টি জায়গায় সিসি ব্লক ধসে পড়ছে। বেড়িবাঁধের ঢালুতে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি এবং নিচের একাধিক অংশের সিসি ব্লক সরে যাচ্ছে সামান্য জোয়ারের ধাক্কায়। জোয়ারের ধাক্কায় বেড়িবাঁধের পশ্চিমপাড়া থেকে দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত আরও এক কিলোমিটার অংশে একাধিক জায়গায় (নিচে স্থাপিত) সিসি ব্লক ধসে পড়েছে।
ধসেপড়া অংশের ফাঁকে ফাঁকে বালুর জিওব্যাগ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও জেলেরা জাল মেরামত করছেন। আবার দলবেঁধে বিভিন্ন বয়সের কিশোর, যুবক ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা বেড়িবাঁধের ওপর আড্ডা দিচ্ছেন। পশ্চিমপাড়া, মাঝেরপাড়া থেকে দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে ঘোলাপাড়া অংশে জোয়ারের আঘাতে হুমকির মুখে পড়েছেন।
কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা ফয়সালের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতরাতে হঠাৎ করে পূর্ণিমার জোয়ারের পানি বেড়ে গিয়ে ঢেউ এসে বাঁধের উপর ব্লকে আছড়ে পড়ছে। এতে করে ব্লকগুলো সরে যাচ্ছে। জোযারের পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে গতরাতে এলাকার মানুষদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
পাউবোর টেকনাফ উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, জোয়ারের পানিতে বাঁধের সিসি ব্লকগুলো সরে যাচ্ছে। আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার আবহাওয়ার পূর্ব সতর্কবার্তা রয়েছে। এর প্রভাবে গত রাতে পূর্ণিমার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১০-১২ ফুট বেড়ে যাওযায় বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে বেড়িবাঁধের ব্লকগুলো ধসে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাউবোর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রে জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে গেছে। শাহপরীর দ্বীপে নির্মিত বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে বেজা বড় বড় পাইপ দিয়ে নাফ নদী থেকে বালি উত্তোলনের সময় বেড়িবাঁধের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন অংশে ব্লক সরে যাচ্ছে। বাঁধটি নির্মাণ করার সময় চরটা অনেক দূরে ছিল। সাগরের অব্যাহত ভাঙনে বর্তমানে বাঁধের কাছে চলে আসায় বড় ঢেউগুলো বাঁধের উপর ব্লকে আছড়ে পড়ছে। তাই ব্লক ধসে পড়ছে। সেখানে নতুন করে আরও অতিরিক্ত ব্লক ফেলে ভাঙন/ধস ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে। এজন্য নতুন করে একটি প্রকল্প বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই