ঢাকার সচিবালয়ের আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোয়ানুর জামান নয়নের রংপুরের মিঠাপুকুরের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাবা মায়ের এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে নয়ন ছিল ছোট। সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর থেকে জ্ঞান হারাচ্ছেন মা নার্গিস বেগম।
নিহত সোয়ানুর জামান নয়ন (২৪) রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের ছড়ান আটপড়িয়া গ্রামের কৃষক আখতারুজ্জামানের ছেলে। তিনি দুই বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন।
নয়নের মা নারগিস বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলের ডিগ্রির রেজাল্ট হলে প্রমোশন হতো, তারপর বিয়ে করতো। আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। ছেলের প্রমোশন হলো না।
নয়নের ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবারের উপার্জনকারী একমাত্র ছেলে জমিজমা বিক্রি করে চাকরি নিয়েছিলো। তার মৃত্যুতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেল। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে ব্যাংকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ করেছিল।
নিহতের স্বজনরা বলছেন, নয়নই ছিল পরিবারের ভরসা। তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখতেন তার মা-বাবা ও বোন। কিন্তু হঠাৎ এমন মৃত্যুতে পুরো পরিবার নিস্তব্ধ। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সড়কে বেরিকেড না দেওয়ায় সেই সড়ক দিয়ে ট্রাক ঢুকে পড়ায় এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের। ট্রাকচালককে অতি দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি অসহায় নয়নের পরিবারের পাশে যেন সরকার দাঁড়ায় সে দাবিও জানান তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নয়নের মরদেহ আনতে গিয়েছেন বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা। ঢাকা থেকে লাশ নিয়ে রংপুরে ফেরার পর দাফন সম্পন্ন করা হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে যখন আগুন নেভানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলছিল। পেশাগত দায়িত্ব পালনে তেজগাঁও থেকে ছুটে গিয়েছিলেন নয়নও। যুক্ত হয়েছিলেন আগুন নেভানোর কাজে। হঠাৎ বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক ধাক্কা দেয় তাদের। এতে গুরুতর আহত হন নয়ন ও হাবিবুর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে নয়নকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল