বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

ছোটবেলার ঈদের কথা খুব মনে পড়ে

অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী

ছোটবেলার ঈদের কথা খুব মনে পড়ে

এখন ঈদের দিন খুব ব্যস্ত সময় পার করি। প্রচুর খাওয়া-দাওয়া আর শুভেচ্ছা বিনিময়েই দিনটি কেটে যায়। কখনো কখনো টিভি দেখি আর খবরের কাগজ পড়ি। ঈদের সময়টা ঈদের বিশেষ সংখ্যা পড়েই কেটে যায়। অনেক মজার মজার গল্প আর কবিতা সমগ্রগুলো অনেক ভালো লাগে। সব দেখার পরও রাতে যখন ঘুমাতে যাই, তখন খুব মনে পড়ে ছেলেবেলার ঈদের সময়গুলো। তখন হারিয়ে যাই ছোটবেলার আনন্দঘন দিনগুলিতে।

আসলে দুই ঈদের মধ্যেই অনেক ফারাক। আর এ জন্য যখনই সুযোগ মিলে তখনই চলে যাই মাটির মিতালিতে। ঈদের পরদিন গ্রামের বাড়িই আমার ঠিকানা। ছেলেবেলার বন্ধুদের অনেকেই নেই। নেই বাবা-মা, চাচা-চাচি। রক্তের বাঁধন না থাকলেও আছে ছোটবেলার গ্রাম, মসজিদ, পুকুর, সবুজ-শ্যামল বাগান ও গ্রামের মুরবি্বরা কেউ নেই। এলাকার অর্ধেকের চেয়ে বেশি ছেলে বিদেশে আছে। কেউ মধ্যপ্রাচ্য, কেউ ইতালি, ফ্রান্স ইংল্যান্ড, জার্মানি বা সিঙ্গাপুরে। মনে হয় সেই ঈদ নেই, সেই বন্ধুরা নেই।

ছোটবেলার ঈদের সেদিনের কথা কি আর ভোলা যায়? খুব সকালে উঠে দোস্তদের সঙ্গে মিলে হৈচৈ করে পুকুরে গোসল করা। আমি ঢাকায় লেখাপড়া করি, ঢাকায় বড় হচ্ছি। তাই গ্রামের ছেলেদের কাছে আমি ছিলাম ঢাকাইয়া পোলা। সেন্ট গ্রেগরির ছাত্র। তাই গ্রামের দোস্তরা আমাকে খুব মানত। ছোটদের নেতা হিসেবে ঈদের দিন ইয়ার দোস্তদের নিয়ে হৈচৈ করা। এই সাঙ্গাৎদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে তাদের বাড়িতে, আমাদের নিজেদের বাড়িতে এবং আত্দীয়স্বজনদের বাড়িতে ধুমধাম করে খাওয়া-দাওয়া এবং গ্রামের মসজিদে নতুন জামাকাপড় পরে নামাজ পড়ার নাম ছিল ঈদ। বাবা-চাচা, মা-চাচি এবং বড় ভাবীদের নামাজ শেষে পা ছুঁয়ে সালাম করা এবং তাদের কাছ থেকে আট আনা/এক টাকা ঈদের বকশিশ আদায় করা ছিল ঈদের রুটিন।

তবে ছেলেবেলার ঈদ আর এখনকার ঈদের মধ্যে বিরাট ফারাক। এখনকার ঈদের মূল নায়ক-নায়িকা হচ্ছে আমার চার নাতি-নাতনি এবং একই সঙ্গে ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ের জামাইরা। ভাগ্যিস আমার সংসারের সার্বিক দায়িত্বের শতকরা ৯০ ভাগ পালন করেন আমার স্ত্রী, যাকে ছাড়া সংসারের কাজকর্ম ভাবতেই পারি না, ঈদ তো মোটেই নয়। জামাই, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের কী কী গিফ্ট করতে হবে, তার লিস্ট করা এবং কেনার দায়দায়িত্ব ১০০ ভাগ আমার স্ত্রীর। তাই এসব টেনশন আমার কখনই ছিল না। অবশ্য দিন আরও পাল্টেছে। এখনকার পরিপ্রেক্ষিত আরও ভিন্ন। আজ আমি সংসারের বড় মুরবি্বর একজন। ঈদের দিনে নামাজ পড়তে যাই গুলশানের আজাদ মসজিদে, আমার ছেলে মাহী তার দলবল এবং আমার দলের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানকে নিয়ে। আমার তিন সন্তান, নাতি-নাতনি সবাই মিলে এখনকার ঈদের আনন্দ অন্য রকম। এই হলো ঈদ আনন্দ ও দায়িত্বশীলতার ভাগাভাগি। ঈদ এলে দুই জামাইয়ের কথা ভাবতে হয়। ছেলের বউয়ের কথা ভাবতে হয়। ফলে ঈদ মানেই এখন ঈদের মার্কেটিং। নাতি-নাতনিদের কাপড়সহ, ছেলেমেয়ে, জামাইদের পাঞ্জাবি, কোর্তা, শাড়ি মোটামুটি লেটেস্ট ডিজাইনের হওয়া চাই। এখানেই যদি মার্কেটিং শেষ হতো, তাহলে একটা কথা ছিল। আসলে এখানেই শেষ নয়। আমাদের ঘরে কাজ করে যারা, তিন শিফটের দারোয়ান, আমাদের মালি, কয়েকজন ড্রাইভার তাদেরও ঈদের গিফ্ট দিতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে সবার জন্য পাঞ্জাবি এবং ক্যাশ।

আল্লাহকে ধন্যবাদ, আমার বেগম সব কিছু সুচারুরূপে সম্পন্ন করেন। আমার সঙ্গে যারা আমার ক্লিনিকে কাজ করেন তাদের অবশ্য ক্যাশ দিয়েই কাজ সেরে ফেলি। আমি ভাবতেই পারি না, আজকাল ঈদ মার্কেটিং করে আমার হার্টের প্রবলেমসহ সুস্থ শরীরে বাসায় ফিরে আসা সত্যি সত্যি সম্ভব কি না। তবে আমার স্ত্রী, বিশেষ করে আমার মেয়েরা যেভাবে ঈদের সব ঝক্কি-ঝামেলা সামলে সুস্থ শরীরে ফিরে আসেন, সেটা আল্লাহর রহমত। ঈদের দিন বেলা ১১টা-১২টায় আমার দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে প্রচুর কোলাকুলি করতে হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু ফুল নিয়েই আসেন না। সঙ্গে ঈদের গিফ্ট হিসেবে কিছু কিছু জামাকাপড় নিয়ে আসেন। মেজর মান্নান তো বটেই। তারপর দুপুরে বিশ্রাম, বিশ্রাম শেষ করে ভাই-বোনদের বাড়িতে যাওয়া, সেখানে ভাগনে-ভাগনি, ভাতিজা-ভাতিঝিসহ আনুষ্ঠানিকতা, কোলাকুলি, সালাম বিনিময় এবং ছোটদের বকশিশ প্রদান। রাতের বেলা, সন্ধ্যার পর আমার শ্বশুরবাড়ির দাওয়াত কবুল করতে হয়। ব্যস, এই তো, এভাবেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টে যায়ে জীবনের গতিপথ।

 

সর্বশেষ খবর