সোনালি যুগের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সি বি জামান ১৯৬৫ সালে লাহোরের চিত্রপরিচালক এস এ বোখারীর ‘পাগলী সামাল যায়েগা’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে লাহোর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আরেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক খান আতাউর রহমানের সহকারী পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তখন তিনি খান আতার কালজয়ী ছবি ‘সাত ভাই চম্পা’র কাজ করেন। সত্তর দশকের শুরুর দিকে ঔপন্যাসিক ডা. নীহার রঞ্জন গুপ্তের ‘বধূ’ উপন্যাস অবলম্বনে তাঁর পরিচালিত ‘ঝড়ের পাখি’ চলচ্চিত্রটি বহুল জনপ্রিয় হয়েছিল। এ ছবিতে অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক ও শাবানা। এরপর ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সরাসরি সিনেমা পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ সময়ে তিনি নির্মাণ করেন- ঝড়ের পাখি (১৯৭৩), উজান ভাটি (১৯৮২), পুরস্কার (১৯৮৩), শুভরাত্রি (১৯৮৫), হাসি (১৯৮৬), লাল গোলাপ (১৯৮৯) ও কুসুম কলির (১৯৯০) মতো কালজয়ী যত সিনেমা। এর মধ্যে ব্যবসায়িক সফলতার পাশাপাশি ‘পুরস্কার’ সিনেমাটি ১৯৮৬ সালে ৯টি ক্যাটাগরির মধ্যে ৬টিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পাশাপাশি ‘পুরস্কার’ চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ‘গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’, ‘দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ ও রাশিয়ার ‘তাশখান্দ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়। এ ছবির জনপ্রিয় গান ‘হারজিত চিরদিন থাকবে তবুও এগিয়ে যেতে হবে’ আজও সমান জনপ্রিয় হয়ে আছে। এ ছবিতে অভিনয় করেন মাস্টার সুমন, শাকিল এবং জনপ্রিয় অভিনেতা প্রয়াত বুলবুল আহমেদ, জয়শ্রী কবির প্রমুখ। সি বি জামান পরিচালিত ‘উজান ভাটি’ ও ‘কুসুম কলি’ চলচ্চিত্র দুটি বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে সংরক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘কুসুম কলি’ ১৯৯০ সালে মুক্তি পেয়েছিল। চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘অরুণ বরুণ কিরণ মালা’। এ ছাড়া তিনি দুটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছিলেন। চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়া তিনি অভিনয় করেছেন অরুণ বরুণ কিরণ মালা, ইয়ে করে বিয়ে, চেনা অচেনা, দিন যায় কথা থাকে, ত্রিরত্ন, নীল আঁচল, মধুমতিসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রায় তিন দশক পর ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘এসএইচকে গ্লোবাল’ প্রযোজিত একটি সিনেমা পরিচালনার জন্য তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন স্বনামধন্য পরিচালক সি বি জামান এবং ‘এসএইচকে গ্লোবাল’র চেয়ারম্যান শামস হাসান কাদির। এ বিষয়ে পরিচালক সি বি জামান সেই অনুষ্ঠানে রাখা তার বক্তব্যে বলেছিলেন, “১৯৯০ সালে আমার সবশেষ সিনেমা ‘কুসুম কলি’ মুক্তি পায়। এরপর অনেক প্রযোজক আমাকে সিনেমা বানানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু কোনো না কোনো অসংগতির কারণে কাজ করিনি। এবার সব কিছু ব্যাটেবলে মিলে যাওয়ায় দীর্ঘ বিরতির পর পরিচালনায় ফিরলাম।” কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরে তিনি সিনেমাটি আর পরিচালনা করতে পারেননি। সি বি জামান আসামের গৌরীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইমাদুর রহমান চৌধুরী ও মায়ের নাম শরীফা খাতুন। তিনি মুরারিচাঁদ কলেজে পড়াশোনা করেছেন। তার স্ত্রী ফাতেমা জামান। তাদের একমাত্র সন্তান চৌধুরী ফরহাদুজ্জামান (সি এফ জামান)। সি বি জামান ২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।