শাহরুখ খানের বহুল প্রতীক্ষিত ‘রইস’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে৷ এই ছবিটি বহু বিতর্কে দানা বাধলেও বলিউডের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি এতী। ইতোমধ্যেই দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে প্রায় ১৩৯.২১ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে এই ছবি৷ বিভিন্ন সূত্রের খবর ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গোটা বিশ্বে মুক্তি পাওয়ার পর এই সংগ্রহের অংকটা ২৭৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে৷
‘রইস’ ছবিটি কিন্তু নির্মিত হয়েছে ভারতের গুজরাতের এক গ্যাংস্টারের জীবনকে ভিত্তি করে৷ ছবিটি যারা দেখেছেন অথবা দেখবেন বলে ঠিক করেছেন তাদের অনেকেরই কৌতূহল রয়েছে শাহরুখ অভিনীত চরিত্র রইসের আসল পরিচয় জানান জন্য৷ দেখে নেওয়া যাক কে এই গুজরাটের গ্যাংস্টার রইস এবং তার উত্থানের কাহিনি৷
শাহরুখ অভিনীত এই ছবির নায়ক রইসের সঙ্গে মিল রয়েছে গুজরাটের কুখ্যাত গ্যাংস্টার আবদুল লতিফের জীবনের৷ এই আবদুল লতিফের জীবন শুরু হয়েছিল একেবারে আমেদাবাদের রাস্তা থেকে। অল্প বয়েসে তিনি জুয়ার টেবিলে মদ পরিবেশন করতেন। তখন ওটাই ছিল কিশোর লতিফের পেশা৷ তারপর ধীরে ধীরে অবৈধ মদের ব্যবসায় ঢুকে পড়েন৷ পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে থাকেন। তার উত্থানের জন্য রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধাকেও সময় মতো তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন৷
শোনা যায় গুজরাটের ওই অঞ্চলের সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য এই আবদুল লতিফ হয়ে উঠেছিলেন এক রবিনহুড। গরিব বেকার মুসলমান যুবকদের থাকা খাওয়া কাজের ব্যবস্থা করে দিতে তাঁকে দেখা যেত। সেই জনপ্রিয়তার জেরে আমেদাবাদ পুরসভার কাউন্সিলরও হয়েছিলেন তিনি৷
আবদুল লতিফের সঙ্গে আবার মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমেরও যোগাযোগ ছিল। তবে ১৯৯২ সালের মুম্বাই বোমা বিস্ফোরণে সঙ্গে জড়িত ১৯২ জনের মধ্যে লতিফের নাম ছিল না৷ যদিও গ্রেফতার হওয়ার পর লতিফ নাকি জানিয়েছিলেন করাচিতে ১৫ মাস থাকার সময় তিনি নিয়মিত দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে দেখা করতেন।
১৯৯৫ সালের ১০ অক্টোবর দিল্লির জামে মসজিদ এলাকা থেকে লতিফকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই সময় গুজরাট পুলিশের অ্যান্টি-টেররিস্ট স্কোয়াড হন্য হয়ে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। পাবলিক টেলিফোন বুথ থেকে কথা বলার জন্যই পুলিশ তার গতিবিধি ও অবস্থান জানতে পারে। ওই সময় আবদুল লতিফের বিরুদ্ধে মোট ৯৭টি মামলা ছিল, যার মধ্যে ১০টি হত্যা মামলা।
পরবর্তী কালে গুজরাটের এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা জানিয়েছিলেন, গুজরাটে বিজেপির উত্থানেই ফলেই লতিফের সাম্রাজ্য নড়বড়ে হয়ে যায়। ৯০ দশকের প্রথমদিকে জনতা দলের সমর্থনে চিমনভাই প্যাটেলের সরকারের সঙ্গে লতিফের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় এলে উল্টে লতিফ তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। সেই সময় লতিফ পালিয়ে পাকিস্তানেও গা-ঢাকা দেন। এরপর কিছুদিন পরে লতিফ গ্রেফতার হলে তাকে সবরমতী কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়।
১৯৯৭ সালের ২৯ নভেম্বর জেল থেকে পালানোর চেষ্টার সময় তিনি ধরা পড়ে যান এবং পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে তার মৃত্যু হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-১৫