প্রথমবার আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান। দ্বিতীয়বার আম্পায়ার্স কলেই সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। প্রথমবার জীবন পেয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। দ্বিতীয়বার স্বপ্নভঙ্গ হয়। মুশফিক প্রথম দিন সেঞ্চুরি করেন। দ্বিতীয় দিন শুরু করেন দারুণ। হিমালয়সমান দৃঢ়তায় ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন ডাবল সেঞ্চুরির পথে। দিনশেষে আর স্বপ্ন পূরণ হয়নি বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর। থেমে যান ১৬৩ রানে। আসিতা ফার্নান্দোর ইনকামিং ডেলিভারিতে গ্ল্যান্স খেলেছিলেন। বলের লাইন মিস করলে আবেদন করেন আসিতা। সাড়া দেন আম্পায়ার। মুশফিক রিভিউ নেন। রিভিউতে দেখা যায় বল ছুঁয়ে গেছে উইকেট। ফলে আউটের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন আম্পায়ার। গল টেস্টের দ্বিতীয় দিন মুশফিকের ৯৭ টেস্ট ক্যারিয়ারের ইনিংসটি থেমে যায় ১৬৩ রানে। ইনিংসটি খেলে মুশফিক আরও একবার জানিয়ে দিলেন, বয়স ৩৮ হলেও দেশের এক নম্বর টেস্ট ক্রিকেটার তিনিই। প্রস্তুত দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলতে। মুশফিকের হতাশার দিন বাংলাদেশ শেষ করেছে ৯ উইকেটে ৪৮৪ রান তুলে। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে ৩০ বার ৪০০ ঊর্ধ্ব স্কোর করেছে বাংলাদেশ। ৭টিই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সাড়ে ৪০০ ঊর্ধ্ব স্কোর করেছে ১৮ বার, যার ৬টির প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। দলগত সর্বোচ্চ স্কোর ৬৩৮ রানের প্রতিপক্ষও আবার শ্রীলঙ্কা।
সাবেক অধিনায়কের মতো হতাশায় দিন পার করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। টাইগার অধিনায়কের সামনে হাতছানি ছিল ক্যারিয়ারের ডাবল সেঞ্চুরির। নাজমুল প্রথম দিন অপরাজিত ছিলেন ১৩৬ রানে। গতকাল মাত্র ১২ রান যোগ করেন টাইগার অধিনায়ক। ব্যক্তিগত ১৪৮ রানে আসিতের বলে আলত ড্রাইভ খেলে মিড অফে দুর্দান্ত ক্যাচ হন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামা অ্যাঞ্জেলি ম্যাথিউসের। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলেন নাজমুল ২৭৯ বলে ১৫ চার ও ১ ছক্কায়। টাইগার অধিনায়কের আউটের সঙ্গে সঙ্গে নতুন একটি রেকর্ড গড়তে ব্যর্থ হন মুশফিক-নাজমুল জুটি। দুজনে চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ২৬৪ রান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ২৬৬। মুমিনুল হক ও মুশফিক এই রান করেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। চতুর্থ উইকেট জুটির বিশ্ব রেকর্ড অবশ্য অনেক বেশি। গত অক্টোবরে মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৫৪ রানের জুটি গড়েছিলেন জো রুট ও হ্যারি ব্রুক। গতকাল শুধু চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়তেই ব্যর্থ হননি দুজন, শ্রীলঙ্কার মাটিতে যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়তেও ব্যর্থ হন। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বোচ্চ রানের জুটি ২৬৭ রান, ২০১৩ সালে গলে মোহাম্মদ আশরাফুল ও মুশফিক এ জুটি গড়েছিলেন।
মুশফিক ১৬৩ রানের ইনিংস খেলেন ৩৫০ বলে। চার মারেন ৯টি। প্রথম দিন চার মেরেছিলেন ৫টি। ৯৭ টেস্ট ক্যারিয়ারে মুশফিক ষষ্ঠবারের মতো ৩০০-এর ঘরে বল খেলেন। সাবেক অধিনায়ক ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি বল খেলেছেন ৪২১টি। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবশ্য ২০২২ সালে মিরপুরে ১৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পথে ৩৫৫টি বল খেলেছিলেন মুশফিক। ক্যারিয়ারে ১২ সেঞ্চুরির ৭টি ১৫০ ঊর্ধ্ব।
নাজমুলের বিদায়ের পর মুশফিক সঙ্গী হিসেবে পান লিটন দাসকে। টি-২০ ক্রিকেটের নেতৃত্ব পাওয়া লিটন শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাটিং করেন। দুজনে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৪৪.১ ওভারে যোগ করেন ১৪৯ রান। শত রানের জুটি গড়েও হতাশাতেই শেষ হয়েছে লিটনের দিন। দারুণ সব স্ট্রোকে সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত সাজঘরে ফেরেন ব্যক্তিগত ৯০ রানে। আউট হয়েছেন অহেতুক রিভার্স সুইপ খেলে। ৯০ রানের ইনিংসটি লিটন খেলেন ১২৩ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায়। টি-২০ অধিনায়ক সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন গত আগস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে। নাজমুল, মুশফিক ও লিটনের আউটের পর খুব বেশি দূর এগোতে পারেন টাইগাররা। যদিও বৃষ্টি ও আলোর স্বল্পতায় খেলা বন্ধ ছিল আড়াই ঘণ্টা। প্রথম দিন খেলা হয়েছে পুরো ৯০ ওভার। দ্বিতীয় দিন সময় বাড়িয়েও ৬১ ওভারের বেশি খেলা হয়নি। সব মিলিয়ে দুই দিনের ১৫১ ওভার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছে ৯ উইকেটে ৪৮৪।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস
১৫১ ওভারে ৪৮৪/৯ (আগের দিন ২৯২/৩) (শান্ত ১৪৮, মুশফিক ১৬৩, লিটন ৯০, জাকের ৮, নাঈম ১১, তাইজুল ৬, হাসান ০*, নাহিদ ০*; আসিথা ২৮-৫-৮০-৩, মিলান ২২.৪-৬-৩৮.৩, থারিন্দো ৪৯.২-৩-১৯৬-৩, প্রাবাথ ৪৮-২-১৫৪-০, ধনাঞ্জয়া ৩-০-৭-০)