‘আমার ছেলেটা অনেক মেধাবী ছিল। আমাকে আদর করে মম বলে ডাকত। আমার সন্তানদের মধ্যে আদিলই মম বলে ডাকত। এখন আর কেউ মম বলে ডাকে না। আমাকে ছাড়া সে ঘুমাতে পারত না। সে বলত মায়ের কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না। আজ আমার ছেলে নেই। আমি আমার ছেলেকে ভুলতে পারছি না।’
এভাবেই বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে শহীদ হওয়া আদিলের মা আয়েশা আক্তার। গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় আদিল হোসেন। আয়েশা আক্তারের কান্নার সঙ্গে সঙ্গে পুরো সম্মেলন কক্ষে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। অনুষ্ঠানে প্রায় সবারই চোখে পানি চলে আসে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা কিছুক্ষণ পর পরই তাদের চোখ মুছছিলেন। শহীদদের মায়ের কান্না যেন থামছিল না। প্রত্যেকের বক্তব্যের সময়ই ঠিক এমন ঘটনা ঘটে। মায়েদের কান্নার সঙ্গে সঙ্গে সবাই কেঁদেছেন।
গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অভিভাবক সমাবেশ ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে একেক শহীদের মা যখন স্মৃতিচারণা করছিলেন তখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শহীদ আদিলের মা আয়েশা আক্তার আরও বলেন, আদিল সেনাবাহিনীতে যেতে চেয়েছিল। অফিসার হবে, দেশের জন্য কাজ করবে। ওর মামা একজন সেনাসদস্য। তাকে দেখেই বলত এক দিন আমিও আর্মি অফিসার হব।
গণ অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে দুই চোখ হারিয়ে ফেলা মাহবুবের মা হালিমা বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ‘আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে আমার ছেলে দুই চোখ হারাল। যে দেশের জন্য চোখ হারাল সেই দেশ দেখতে পারল না। যারা আমার ছেলের চোখ নষ্ট করেছে তাদের বিচার চাই।’
গণ অভ্যুত্থানে আরেক শহীদ মাওলানা মাবরুর হোসাইনের মা শাহনাজ বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ‘আমি আমার ছেলের জন্য ১৮ মাস রোজা রেখেছিলাম। আমাদের বংশে কোনো ছেলে হচ্ছিল না। আমি ১৮ মাস রোজা রাখার পর ছেলের জন্ম হয়েছে। পড়শোনা করে আলেম হয়েছিল। সে অনেক হিসাব করে চলত। সে সবদিক দিয়েই অনেক ভালো ছিল। আমার সেই ছেলেকে তারা মেরে ফেলেছে। আমরা হাসিনার ফাঁসি চাই।’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা সবাই আবেগে আপ্লুত। মাকে তার সন্তানের জন্য সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো শব্দ পৃথিবীতে তৈরি হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা বলতে চাই যে উদ্দেশ্য নিয়ে তারা জীবন দিয়েছে, দেশপ্রেমের কাব্য রচনা করেছে, বীরত্বগাথা রচনা করেছে, আমরা তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে চাই। আমরা একটা বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যাতে আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।