তীব্র বিমান হামলার পর গাজা সিটিতে স্থল অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায় শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা। রাতভর ভারী বোমা হামলা হওয়ার কথা জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। গতকাল এ অভিযানের ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কার্টজ এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন- ‘গাজা জ্বলছে।’ নগরীর ওপর বিমান, সমুদ্র ও স্থল তিন দিক দিয়ে আক্রমণ চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বিকট বিস্ফোরণ দেখার কথা জানিয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। তারা গতকালের বোমা হামলাকে গাজায় দুই বছরের যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক বলে বর্ণনা করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থলসেনারা গাজা সিটির অনেক ভিতরে প্রবেশ করছে। কেন্দ্রস্থলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তারা। আগামী দিনগুলোতে সেনা সংখ্যা আরও বাড়বে। গাজা সিটিতে ৩ হাজার হামাস যোদ্ধা রয়েছে বলে বিশ্বাস আইডিএফের। তাদের মোকাবিলায় এই বাড়তি সেনা নামানো হবে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগই গাজা সিটির। সেখানে ইসরায়েলের বিমান হামলা চলার পাশাপাশি কয়েকটি স্থানে ইসরায়েলি ট্যাংক ঢুকে পড়ার খবর জানিয়েছে বাসিন্দারা। তাদের অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছেন, যদিও তাদের নিরাপদে যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। গাজার সবচেয়ে বড় এই শহরে এখনো কয়েক লাখ বাসিন্দা অবস্থান করছেন, যেখানে ইতোমধ্যে ইসরায়েলি অবরোধের কারণে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, অভিযানটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, গাজা সিটি হামাসের শেষ কয়েকটি শক্ত ঘাঁটির একটি। ইসরায়েল নতুন করে গাজা সিটির বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণ এবং পশ্চিমের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে যতদিন প্রয়োজন ততদিন সেনারা গাজা সিটিতে অভিযান চালাবে। তিনি আরও বলেন, সেনারা অভিযান দ্রুত শেষ করতে চায় এবং জিম্মি ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজা সিটিতে গতকাল শুরু হওয়া স্থল অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আরও অনেক অপরাধের প্রমাণ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।-রয়টার্স ও আলজাজিরা
ওদিকে, গাজায় ইসলায়েলের রাতভর ভারী বিমান হামলার পর সেখানকার পরিস্থিতিতে দ্রুত আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ‘গাজা সিটির বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় বিশেষ ও জরুরি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ’ চায়। বিবৃতিতে চলমান যুদ্ধ থামাতে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ব্যর্থতাকে ‘সন্দেহজনক ও অন্যায্য’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনাকে ফিলিস্তিনি মন্ত্রণালয় বর্ণনা করেছে ‘বেসামরিকদের সরাসরি নিশানা করা, যা গাজা সিটিকে গণকবরে পরিণত করছে।’