যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘খ্রিস্টানদের’ হত্যা বন্ধে মার্কিন সামরিক বাহিনী নাইজেরিয়ায় সেনা মোতায়েন করতে পারে অথবা সেখানে বিমান হামলা চালাতে পারে। রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ফ্লোরিডার পাম বিচ থেকে উড়ে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেরার সময় আকাশযান ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ এ সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি নাইজেরিয়ায় সেনা মোতায়েন না বিমান হামলা চালানোর কথা ভাবছেন।
উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘হতে পারে। মানে, আমি অনেক কিছু বিবেচনা করছি। তারা নাইজেরিয়ায় রেকর্ডসংখ্যক খ্রিস্টানকে হত্যা করছে। তারা খ্রিস্টানদের হত্যা করছে এবং তাদের অনেককে হত্যা করছে। আমরা তাদের এটা করতে দেব না।’ রবিবার ছুটির দিনটি ফ্লোরিডায় তার অবকাশকালীন বাড়িতে কাটান ট্রাম্প। এদিন সকালে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। একই দিন এর আগে নাইজেরিয়া জানায়, যতদিন তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে ততদিন ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন সহায়তাকে স্বাগত জানাবে তারা। এর আগে ট্রাম্প নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের সঙ্গে ‘নিষ্ঠুর আচরণ’ বন্ধ করা না হলে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন। নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য ‘দ্রুত’ সামরিক অভিযান চালানোর জন্য তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন বলে জানান। তার এসব হুমকির প্রতিক্রিয়ায় নাইজেরিয়া ওই মন্তব্য করে বলে রয়টার্স জানিয়েছে, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ টিনুবুর এক উপদেষ্টা ড্যানি বয়ালা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘যতক্ষণ তারা আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে স্বীকৃতি দেবে আমরা তাদের সাহায্যকে স্বাগত জানাব।’ ট্রাম্প নাইজেরিয়াকে একটি ‘সম্মান হারানো দেশ’ বলে উল্লেখ করা সত্ত্বেও বয়ালা দুই দেশের মধ্যে কোনো উত্তেজনা নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এটিকে আক্ষরিকভাবে নেইনি। কারণ আমরা জানি, ডোনাল্ড ট্রাম্প নাইজেরিয়ার ভালো চান। আমি নিশ্চিত, সময় হলেই এই দুই নেতা (ট্রাম্প ও বোলা) সাক্ষাৎ করবেন ও বসে আলোচনা করবেন। আর এর মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ সংকল্পে ভালো কিছু হবে।’ শনিবার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র সরকার অবিলম্বে নাইজেরিয়াকে দেওয়া সব সাহায্য ও সহযোগিতা বন্ধ করবে। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি তার সামরিক বাহিনী পাঠায়, তাহলে তারা ভয়াবহ নৃশংসতা চালাতে থাকা ইসলামিক সন্ত্রাসীদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিতে ‘‘ঝাঁপিয়ে পড়বে’’।’ তবে নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের সঙ্গে কী ‘নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে’ তার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ না দিয়েই এসব লিখেছেন তিনি, জানিয়েছে রয়টার্স। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া মহাদেশটির সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং শীর্ষ খনিজ তেল উৎপাদক। এই দেশটিতে ২০০ জাতিগোষ্ঠী আছে যারা খ্রিস্টান, ইসলাম ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মবিশ্বাসগুলো অনুসরণ করে আসছে। তাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্সের মতো ইসলামপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে হামলা, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। -রয়টার্স
এতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। কিন্তু তাদের হামলাগুলো প্রধানত দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলে সীমাবদ্ধ, যা মুসলিম প্রধান এলাকা। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বিদ্রোহীদের হামলায় খ্রিস্টানরা নিহত হলেও ক্ষয়ক্ষতির শিকার মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠই মুসলিম।