গ্রাম আদালত ব্যবস্থা জোরালো করা গেলে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার ওপর মামলার চাপ কমবে। একই সঙ্গে গ্রাম আদালত মামলাজট কমাতেও সহায়তা করতে পারে।
আজ বুধবার ‘গ্রাম আদালত ব্যবস্থা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, গ্রাম আদালত ও স্থানীয় শালিস ব্যবস্থার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে আমরা অনেক সময়ই এই দুটো বিষয়কে এক করে ফেলি। এ কারণে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
আইন, বিচার ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ তৃতীয় পর্যায় প্রকল্প। জাতিসংঘের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইইউনিয়নের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক সুরাইয়া আখতার জাহান অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়ক বিভাষ চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে গ্রাম আদালত আইনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যানালিস্ট অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মাহফুজা আখতার, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব খোন্দকার নাজমুল হুদা শামিম, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি হাসান জাবেদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএনডিপির সিনিয়র গভর্ণনেন্স স্পেশালিস্ট তানভীর মাহমুদ।
মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যরা গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচতেনতা তৈরিতে বিভিন্ন প্রস্তাব ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে ভিলেজ কোর্ট অ্যাক্ট কার্যকর রয়েছে। তবে এটা সক্রিয় ছিল না। ২০০৬ সালে এই আইনের সংশোধন ও বিধিমালা প্রণয়নের পর থেকে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৪ সালেও নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে আইনটিকে আরও যুগোপযোগী করা হয়েছে। গ্রাম আদালত প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার মতো কোন আদালত বা আদালত ভবন নয়। এটি কেইস বাই কেইস গঠন হয়। একটি কেইস আসলে এই কোর্ট গঠন করার পর তা সমাপ্ত হলে এই আদালতের কার্যক্রমও সমাপ্ত হয়।
বক্তারা আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ে প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি চলছে। দেশের ৬১টি জেলায় গ্রাম আদালত সক্রিয় আছে এবং এর মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে গ্রামের অনেক ছোট খাট সমস্যার নিষ্পত্তি হচ্ছে। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৯ হাজার মামলা সমাধান করা হয়েছে। ২০২৮ সালের মধ্যে এই প্রকল্প শেষ হতে যাচ্ছে। এরপরে আর প্রকল্পটি থাকছে না। প্রকল্প শেষ হলে সরকার এই কার্যক্রম চলমান রাখবে।
তারা আরও বলেন, গ্রাম আদালত ও স্থানীয় শালিস ব্যবস্থার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে আমরা অনেক সময়ই এই দুটো বিষয়কে এক করে ফেলি। এ কারণে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। এই সচেতনতা তৈরিতে সবচেয়ে বেশি কাজ করতে পারে গাণমাধ্যম। গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে আরও জোরালো করা গেলে বিচারপ্রার্থীদের সময় ও অর্থ বাঁচবে। রক্ষা পাবে সামাজিক সম্প্রিতিও। গ্রাম আদালত মামলাজট কমাতেও সহায়তা করতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত