প্রবাসীদের স্বার্থে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবিষয়ক চুক্তি হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই সৌদি আরবের সঙ্গে শ্রমিক পাঠানো নিয়ে একটি নতুন চুক্তি হবে। এমন চুক্তি অতীতে কখনও হয়নি। এমনকি ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গেও সৌদির এমন কোনো চুক্তি নেই। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের শ্রমিকরা সেখানে আরও বেশি নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, গত বছর বিমানের টিকিট ও ভিসা থাকার পরও মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা অনেক কর্মীকে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের নেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে।
জুলাই আন্দোলনে প্রবাসীদের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, নিজেদের জীবন চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে জুলাই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তাদের সেই আত্মত্যাগ চোখে দেখা যায় না।
সরকারের চলমান উদ্যোগ তুলে ধরে উপদেষ্টা জানান, প্রবাসীদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রিইন্ট্রিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় জটিলতা কমাতে মন্ত্রণালয় ডিজিটালাইজেশন করেছে, যাতে বিদেশফেরত কর্মীরা পুনরায় বিদেশ যেতে চাইলে কম হয়রানির শিকার হন।
বিদেশে যাওয়ার আগে যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, প্রতারণার শিকার হয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে না ঝাঁপিয়ে বরং যারা সামর্থ্যবান, তারা চাইলে দেশে থেকেই ছোটোখাটো ব্যবসা করতে পারেন। বিদেশ মানেই স্বর্গ নয়।
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবে গিয়ে আমি দেখেছি– এমন খারাপ পরিবেশে মানুষ থাকে যে ঢাকার খারাপ বস্তিতেও তার চেয়ে ভালো থাকে। ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা খরচ করে অনেকেই দুর্ভোগে পড়ছেন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তা করা উচিত।’
দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় প্রবাসীদের দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, বিদেশে আপনারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। আপনাদের কিছু কাজের জন্য দেশের ভাবমূর্তি যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ৯৯ শতাংশ মানুষ ভালো কাজ করেন, কিন্তু ১ শতাংশের ভুলের জন্য সব অর্জন ম্লান হয়ে যায়। প্রবাসীদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে সমর্থন দিয়েছেন, তা চোখে দেখা যায় না। তবে এই আত্মত্যাগ আমাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম