লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলার পানি কমলেও দুর্ভোগে রয়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। তীব্র ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এদিকে ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
লালমনিরহাট : তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি কমলেও দুর্ভোগে রয়েছেন লালমনিরহাটের নদীপাড়ের মানুষ। ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। গত এক সপ্তাহে ১৯টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙনের মুখে থাকা ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করে তিস্তার পানি বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যায় হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার অন্তত ১৫ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বুধবার সকাল থেকে পানি কমা শুরু করে। এর সঙ্গে সঙ্গেই দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত সাত দিনে তিস্তা ও ধরলার ভাঙনে ১৯টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা অলিমা খাতুন (৪৫) আহাজারি করে বলেন, ‘হামাক বাঁচান বাহে, হামার শোগ শ্যাষ। সব নদীত ভাঙিয়া গেইছে বাহে। হামাক বাঁচান। হামরা কই যামো কী খামো, শোগ নদী ভাঙি নিয়া যাবার লাগছে।’
তিস্তাপাড়ের আরেক ভুক্তভোগী তসর উদ্দিন (৫০) বলেন, ‘বাড়ির পাশ পর্যন্ত ভাঙন আসছে। আমার বাড়িটা যে কোনো সময় ভাঙতে পারে। সরকার শুধু হামাক বুঝ দেয়।’
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, জেলার তিস্তা ও ধরলা নদীর প্রায় ২৫টি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে কিছু জায়গায় কাজ চলমান রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হবে। জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল, ডাল, চিড়া ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।
ফেনী : ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পাঁচ উপজেলায় ১২৬টি গ্রামীণ সড়কের প্রায় ৩১৯ কিলোমিটারে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ছাগলনাইয়ায় সবচেয়ে বেশি ১২৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় ৯০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। গত ৭ জুলাই থেকে ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ৪২টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে আকস্মিক বন্যা হয়। এরপর ২৫ জুলাই থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ায় ওই স্থানগুলো দিয়ে পানি প্রবেশ করে এক মাসেই দুই দফা বন্যার কবলে পড়েন স্থানীয়রা। ফেনীর স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ‘কোনো কোনো সড়ক ৫-৬ ফুট পানির নিচে ছিল। এই উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হওয়ায় রাস্তার বড় অংশ বিলীন হয়ে গেছে। অনেক স্থানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।’
শরীয়তপুর : টানা বৃষ্টি ও পদ্মায় স্রোতে ভাঙন থামছেই না শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে। ভাঙনে বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ৭২টি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ২ শতাধিক ঘরবাড়ি। দ্রুত সময়ে ভাঙন ঠেকানো না গেলে নদীতে হারিয়ে যাবে কয়েকটি গ্রাম।