রক্ষণশীল চিন্তা-চেতনায় উজ্জীবিত সংগঠক চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড পুঁজি করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তার কৌশল অবলম্বন করেছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সমাজে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। ভিন্নমত পোষণকারীদের বাকরুদ্ধ করার মতো পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিচ্ছেন, যা সামাজিক-রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় স্থিতির জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ১৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পেনসিলভেনিয়া স্টেটের এরি সিটিতে অবস্থিত ‘এরি ইন্স্যুরেন্স এরিনা’য় ‘জেফারসন এডুকেশনাল সোসাইটি’র ১৭তম বার্ষিক গ্লোবাল সামিটে বিশেষ এক পর্বে বারাক ওবামা ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয়ংকর শত্রু হিসেবে অভিহিত করে তাদের নির্মূল/ শায়েস্তার হুমকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মুখে যখন বলতে শুনি, তখন অবাক হয়ে পড়ি। কোনদিকে হাঁটছি আমরা? এভাবেই সারা আমেরিকার জনগণকে ভীতির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’
চার্লি কার্কের মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না, তা নিদারুন এক কষ্টের ব্যাপার। তারপরও আমেরিকানদের ভিন্নমতের মানুষের কথা ধৈর্যের সঙ্গে শুনতে হবে-এটাই তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। ওবামা এমন অভিমত পোষণ করে বলেন, ‘চার্লির বক্তব্যের সঙ্গে আমি কখনোই একমত ছিলাম না। তাই বলে তাকে মেরে ফেলতে হবে? তার কথা শুনতে হবে, যুক্তির আলোকে খণ্ডনের চেষ্টা করতে হবে-এটাই তো গণতন্ত্র, কথা বলার স্বাধীনতা। আমরা ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান বা স্বতন্ত্র-যাই হই না কেন সবার কথা ধৈর্যের সঙ্গে শুনতে হবে। এমনকি যারা চরমপন্থির মতো মতামত ব্যক্ত করেন এবং আমি যেটি বিশ্বাস করি তার সঙ্গে চরম দ্বিমত পোষণ করেন, তাদেরও কথা বলার অধিকার দিতে হবে এবং এটাই তো আমেরিকার সত্যিকারের মূল্যবোধ, তারাও তো আমেরিকার অংশ। রিপাবলিকান পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রসঙ্গ টেনে ওবামা বলেন, ‘তিনিও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। এমনকি আমি যাদের বিরুদ্ধে মনোনয়নের জন্য লড়েছি, জন ম্যাককেইন, মিট রমনি-তারাও তা বিশ্বাস করতেন। আমি যা বলতে চাই তা ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান পার্টির মতামত নয়, তা হচ্ছে আমেরিকার মূল্যবোধের প্রতিচ্ছবি এবং আমি মনে করছি, তেমন আচরণে উজ্জীবিত থাকার এটাই উত্তম সময়। এখন সময় হচ্ছে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রেসিডেন্টকে অত্যন্ত বিবেকপ্রসূত আচরণে লিপ্ত থাকা। উত্তেজনাকে উসকে দেওয়া নয়।’ ওবামা উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) এখন বিরাজিত রাজনৈতিক উত্তেজনাকে বরঞ্চ উসকে দিচ্ছেন, যা আগে কখনো দেখিনি। এ সময় বারাক ওবামা তার শাসনামল ২০১৫ সালে সাউথ ক্যারলিনার চার্লস্টন চার্চে বন্দুক হামলায় ৯ কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থি ডিল্যান এস রুফ অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় চার্চে উপাসনারত ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি কিন্তু সে সময় এহেন হিংস্রতার বিরুদ্ধে কাউকে খ্যাপিয়ে তোলার চেষ্টা করিনি, অথচ এখন তেমন আচরণ করতে দেখছি (প্রেসিডেন্টকে)।’
উল্লেখ্য, চার্লি কার্কের নিহত হওয়ার দায় বামপন্থি চিন্তা-চেতনার মানুষের ওপর চাপিয়ে তাদের কঠোর হস্তে দমনের হুমকি দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। এর ফলে সারা আমেরিকায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক সম্প্রীতির যে বন্ধন বিরাজ করছে তাকে তছনছ করার মত আচরণে লিপ্ত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-এমন অভিযোগ প্রায় সব মহলের। তেমন দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে বারাক ওবামার এ বক্তব্য সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
সিএসপিএনের সাবেক অ্যাঙ্কোর স্টিভ স্কালির সঞ্চালনায় এ সামিটে ৮ হাজারের অধিক আমেরিকান অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বারাক ওবামা গাজা পরিস্থিতিসহ বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকেও নিজের মতামত উপস্থাপন করেন।