জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শহীদদের বিতর্কিত করার চেষ্টার অভিযোগে যশোরে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার বিরুদ্ধে গতকাল দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। পরে প্রথম আলো পত্রিকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের শহীদ স্বীকৃতি পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তারা বলেন, প্রথম আলোর এ প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গণ অভ্যুত্থানে শহীদদের বিতর্কিত করতে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এজন্য প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশের দাবিও জানান জুলাই শহীদদের স্বজনরা।
যশোরের জাবির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে নিহত শহীদ আবরার নীলের মা জেসমিন আক্তার অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ৯ বছরের নিষ্পাপ বাচ্চা আগুন নেভাতে গিয়ে পুড়ে মারা গেছে। সে গিয়েছিল উদ্ধার করতে। সে কীভাবে দুর্বৃত্ত হলো? তাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন, লুটকারীর কলঙ্ক দেবেন না’। শহীদদের স্বজনরা বলেন, প্রথম আলো ১৬ শহীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে লিখলেও প্রকৃতপক্ষে আমাদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করেই মতামত ছেপেছে। এটা গুরুতর নীতিবিরোধী কাজ। মানববন্ধনে জুলাই শহীদ স্বজনদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সাবেক আহ্বায়ক রাশেদ খান, শহীদ ইউসুফ আলীর মা শাহীনা খাতুন, শহীদ সোহানুর রহমানের বাবা আনোয়ার হোসেন লাল্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়নের দিন ৫ আগস্ট বিকালে যশোরের পাঁচ তারকাবিশিষ্ট জাবির হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। তাদের প্রায় সবাই জুলাই যোদ্ধা এবং আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজে অংশ নিতে গিয়ে প্রাণ হারান। জাবির হোটেলটি নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের। তিনি বিনা ভোটের নির্বাচনে যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যশোর-৬ আসন থেকে দুই দফায় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
এই হোটেলটিকে আওয়ামী আমলের যশোরের দুঃশাসন ও নিপীড়নের প্রতীক হিসেবে দেখে যশোরবাসী। ১৭ তলাবিশিষ্ট এই অভিজাত হোটেলটি ছিল সমাজবিরোধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।