ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ১৪ শতাংশ কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে, যার বেশির ভাগই তৈরি পোশাক। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পাল্টা শুল্ক ও এলডিসি উত্তরণ বিষয়ক এক কর্মশালায় এই তথ্য জানানো হয়। সংস্থার চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘পাল্টা শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের আমদানি ১০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কমতে পারে। এতে বাজার ছোট হয়ে যাবে, আর ছোট বাজারে রপ্তানি করা আরো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তবে বাংলাদেশের অবস্থা তুলনামূলক ভালো হতে পারে, কারণ ভারতসহ অনেক দেশের রপ্তানি পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।’
বিভিন্ন দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে আগামী এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানি প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি ১২ শতাংশ হ্রাস পাবে। এতে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের অতিরিক্ত রপ্তানির সুযোগ আর নেই। তবে বিকল্প হিসেবে ইউরোপের বাজার ধরার বড় সুযোগ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন র্যাপিড চেয়ারম্যান।
অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ সরকার তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। তবে কর্মশালায় অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, এতে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম। কারণ ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্রও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে।
বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি বিদেশি একটি টিমের সঙ্গে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছি। তবে বিষয়টি ধীরগতিতে এগোচ্ছে। আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম, কারণ এই প্রস্তাব জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তুলতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে ভোটে পাস করতে হবে।’
তিনি আরও জানান, সূচকে ভালো অবস্থানে থাকায় বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো চাইছে না বাংলাদেশ বাড়তি সময় পাক। প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র যেমন-জাপান, তুরস্ক, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এর বিরোধিতা করছে।
তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশ এসব দেশ থেকেই টেকনিক্যাল সহায়তা নিচ্ছে, যেন তারা সরাসরি বিরোধিতা না করে। তার মতে, এলডিসি থেকে উত্তরণ তিন বছর পিছিয়ে দিতে পারলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।
২০১৮ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। মূলত ২০২৪ সালে প্রস্তুতি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কভিড মহামারির কারণে বাংলাদেশ অতিরিক্ত দুই বছর সময় পায়। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
বর্তমানে বাংলাদেশ এলডিসি সুবিধার আওতায় বিভিন্ন দেশের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। কিন্তু ২০২৬ সালের পর এসব সুবিধা আর থাকবে না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা বারবার উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। গত ২৪ আগস্ট দেশের শীর্ষ ১৬টি বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে উত্তরণ তিন থেকে ছয় বছর পিছিয়ে দেওয়ার আহবান জানান।
কর্মশালায় র্যাপিড চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক বলেন, মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও জলবায়ু-অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিন সূচকেই বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকায় উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ জাতিসংঘে এই প্রস্তাব পাসের জন্য অর্ধেকের বেশি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে কঠিন।
তবে তিনি মনে করেন, বর্তমান অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক পরিবর্তন ও তথ্য-উপাত্তের ঘাটতির বিষয়গুলো উল্লেখ করে জাতিসংঘে আবেদন জানালে হয়তো সময় বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরা সম্ভব।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ