কুমিল্লা শহরের দিগম্বরীতলার একটি বাড়ির ছাদে প্রতিদিন ভোরে জমে ওঠে এক অনন্য আয়োজন- পাখিদের জন্য খাবার পরিবেশন। এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের আয়োজক ৭৬ বছর বয়সী সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম। গত এক দশক ধরে তিনি নিয়ম করে ছাদের বাগানের পাশের চিলেকোঠার চালা ও কার্নিশে ছিটিয়ে দেন চাল, গম, ভুট্টার মিশ্রিত খাবার।
ভোর হতেই তার ডাক শুনে আশেপাশের ছাদে ভিড় জমায় ঘুঘু, চড়ুইসহ নানা প্রজাতির পাখি। সঙ্গে আসে কিছু পালিত কবুতরও। খাবার শেষে তারা ঠোঁট ডুবিয়ে নেয় ছাদে রাখা পানির পাত্রে। এই দৃশ্য যেন শহরের কংক্রিটে এক ফালি শান্তি ও প্রাণের ছোঁয়া।
সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ি করার পর ছাদে বাগান করি। একদিন বাগানে পানি দিতে গিয়ে দেখি পাখি আসছে। তখন থেকেই তাদের খাবার দেই। এখন তো তারা আমার অপেক্ষায় থাকে। আর আমি তৃপ্তি পাই।’
এ দৃশ্য উপভোগ করেন আশেপাশের প্রতিবেশীরাও। জানালা খুললেই চোখে পড়ে পাখির জন্য এমন আন্তরিক আপ্যায়ন।
সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম শুধু প্রকৃতি প্রেমিকই নন, সামাজিক কাজেও সক্রিয়। তিনি মৃতের গোসল ও কাফন-দাফনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা কৃষি ও কারিগরি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আখন্দ।
ঐতিহ্য গবেষক নাজমুল আবেদীন বলেন, ‘সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম পাখিকে খাইয়ে যে কাজটি করছেন, তা শুধু মানবিকই নয়, এটি একটি পুণ্যের কাজও। তার এই উদ্যোগ আরও ছড়িয়ে পড়ুক।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, ‘নগর জীবনে মানুষ যেখানে একটু সবুজ আর প্রাণ খোঁজে, সেখানে সৈয়দ সাহেব ছাদে বাগান গড়ে তুলে নিজের সময়কেও প্রাণবন্ত করেছেন। পাখিদের খাবার দিয়ে প্রকৃতির প্রতিও দায়িত্ব পালন করছেন।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ