শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ে মালিকপক্ষের গাফিলতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে পলাতক মালিকদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারির আবেদন করা হয়েছে। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কারখানা মালিকদের দিচ্ছে সুদমুক্ত ঋণ। এরপরও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে মালিকপক্ষের পাসপোর্টও বাতিল করা হবে। সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের ব্যবস্থা করছে সরকার। এ ছাড়া কারখানায় উন্নত মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ২০ জন শ্রমিকের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ রেখে শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি শ্রম ও ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৩তম সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যর্থ হলে আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নাসা গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। বিক্রি করে শ্রমিকের বেতন-ভাতাদি পরিশোধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে ব্যর্থ হলে মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নাসা গ্রুপের মালিক, মালিকের স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের পাসপোর্ট বাতিল করা হবে। ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন-২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত হবে এবং কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আরও সহজ করা হচ্ছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং পলাতক মালিকদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যারা শ্রমিকদের প্রতি অন্যায় করবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হব। শ্রম অধিকার লঙ্ঘন ও সংশ্লিষ্ট আইনগত অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম অসন্তোষ নিরসনে সরকার বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইলস লি., রোয়ার ফ্যাশন লি., মাহমুদ জিন্স লি., স্টাইল ক্রাফট লি. এবং গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লি.-কে অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় তহবিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু সুদমুক্ত ঋণের টাকাও আনেক কারখানা পরিশোধ করছে না। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হলেও ঋণের সব টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের টাকা আদায়ে টিএনজেড গ্রুপ ও রোর ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।