আবারও চোখ রাঙাতে শুরু করেছে করোনাভাইরাস। দেশে বাড়তে শুরু করেছে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। করোনার থাবায় ঝরছে প্রাণ। চলতি সপ্তাহে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাই সংক্রমণ প্রতিরোধে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ৩১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ জনের শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ বছর করোনায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৭৬ জন, মারা গেছেন ২৯ হাজার ৫০৬ জন।
করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, রোগ নির্ণয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান। তিনটি মাধ্যমে আমরা করোনার নমুনা পরীক্ষা করছি। চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও বিভিন্ন হাসপাতালে ডেডিকেটেড ইউনিট করেছি। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বর্তমান প্রস্তুতি রোগীর চাপ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী যথেষ্ট। বাংলাদেশে যে পরিমাণ করোনা রোগী এবং পরীক্ষার যে হার, তাতে বোঝা যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে সেই মাত্রায় লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু এখনো দেখছি না।
সংক্রমণ প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসাধারণের করণীয় বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন এবং উপস্থিত হতেই হলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন। হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাকমুখ ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন। ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন (অন্তত ২০ সেকেন্ড)। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ ধরবেন না। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে হবে। রোগীর নাকমুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। রোগীর সেবাদানকারীদেরও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
প্রিন্স অব সংক্লা ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের ভিজিটিং প্রফেসর ড. বিজন কুমার শীল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বাড়তে শুরু করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জার্মানিতে এ ভ্যারিয়েন্টে রোগী শনাক্ত হয়। সেখান থেকে ইউরোপ, আমেরিকা, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, থাইল্যান্ডে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে ৫৪ হাজার জন। অন্য ভ্যারিয়েন্টে ভাইরাস ফুসফুসে বিস্তার ঘটাত কিন্তু এ ভ্যারিয়েন্ট শ্বাসনালিতে বংশবিস্তার করতে পারায় সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এর কারণ হিসেবে এই অণুজীব বিজ্ঞানী বলেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট মিউটেশন হয়ে জেএন১ ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছিল। জেএন১ ভ্যারিয়েন্ট থেকে কেপি৩.৩ এবং কেএস.১.১ ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছিল। এই দুই ভ্যারিয়েন্ট এক জায়গায় হয়ে তৈরি হয়েছে এক্সইসি ভ্যারিয়েন্ট।
এই দুই ভ্যারিয়েন্ট থেকে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য এ ভ্যারিয়েন্টে এসেছে। এটার স্পাইক প্রোটিনে টি২২এন এবং কিউ৪৯৩ই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ মিউটেশন হয়েছে। আমার মনে হয়, এর ফলে এ ভ্যারিয়েন্ট জেএন১ ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ১০ গুণ বেশি সংক্রামক। এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও অতটা প্রাণঘাতী হবে না। তবে বয়স্ক ব্যক্তি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ আছে এমন রোগীরা ঝুঁকিতে থাকবেন। তাই তাদের ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।